নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে - nid করতে কি কি লাগে
আপনার যারা নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে চান তাদের মনে একটি প্রশ্ন থাকতে পারে যে, ভোটার আইডি কার্ড করতে আসলে কি কি ডকুমেন্টস লাগে।
নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে |
আজকের এই আর্টিকেলে জাতীয় পরিচয় পত্র করার জন্য যে যে কাগজপত্র লাগে তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে?
নতুন ভোটার আবেদন করতে কি কি লাগে তা নিচে তালিকা আকারে দেওয়া হলঃ
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
- শিক্ষা সনদ
- স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ড
- অঙ্গিকারনামা
- হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ
- ইউটিলিটি বিলের কপি
- পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি
- রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট
- প্রতিবন্ধী সনদ
- সার্ভিস আইডি কার্ড
এসব ডকুমেন্টের সঙ্গে চাইলে পাসপোর্ট নাম্বার, ড্রাইভিং লাইসেন্স সংযুক্ত করতে পারেন। পূর্বে কখনো জাতীয় পরিচয় পত্রে নিবন্ধন করেননি এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা ভোটার নিবন্ধনের আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন সনদ
এনআইডি কার্ড করতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন হবে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট (Digital Birth Ceritifcate)। জন্ম নিবন্ধনে বাংলা তথ্যের পাশাপাশি ইংরেজি তথ্য থাকা উচিত। আপনার যদি জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ইংরেজিতে না থাকে। তবে খুব সহজেই অনলাইনে ইংরেজি তথ্য যুক্ত করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শিক্ষা সনদ
জন্ম নিবন্ধনের পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হল শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত একাডেমি সার্টিফিকেট।যেমনঃ SSC অথবা HSC সার্টিফিকেট। সার্টিফিকেটে নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম এবং জন্ম তারিখ জন্ম নিবন্ধনের সাথে অবশ্যই মিল থাকতে হবে।
যদি এসব তথ্যে কোন ধরনের গরমিল থাকে, তাহলে এনআইডি কার্ড করা যাবে না। আর তাই এসব তথ্য পূর্বে চেক করে নিতে হবে। কারও শিক্ষা সনদ না থাকে তার পরিবর্তে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যেতে পারে। তা যদি না থাকে, তাহলে শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন হলেও চলবে।
পিতা-মাতার এনআইডি কার্ড
বর্তমানে নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যে পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার যুক্ত করতে হয়। আর তাই নতুন ভোটার হতে অবশ্যই পিতা এবং মাতার এনআইডি কার্ড প্রয়োজন হবে। পিতা এবং মাতার এনআইডি কার্ডে তাদের নাম আপনার সকল ডকুমেন্টস যেমনঃ জন্ম নিবন্ধন এবং শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে। এছাড়াও পিতা মাতার কেউ মৃত হলে অবশ্যই মৃত্যুর নিবন্ধন সনদ সাথে যুক্ত করতে হবে।
নাগরিক সনদ
নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করতে নাগরিক সনদ হল একটি বাধ্যতামূলক ডকুমেন্ট। ইহা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। ইহাকে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট বা চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন পত্র ও বলা হয়।
স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ড
ভোটার আবেদনকারী যদি বিবাহিত হন, তবে আবেদনের সঙ্গে অবশ্যই স্বামী বা স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি জমা দিতে হবে। এছাড়া আইডি কার্ডের পাশাপাশি নিকাহনামা বা কাবিন নামার কপিও জমা দেয়া যায়।
অঙ্গীকারনামা
ভোটার আইডি কার্ডের অঙ্গীকারনামা হল একটি লিখিত অঙ্গীকার। যা দ্বারা আবেদনকারীর পূর্বে কোন এলাকা থেকে ভোটার নিবন্ধন করেন নি তা বুঝায়। তিনি দ্বিতীয় বার ভোটার হয়েছেন বলে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন। নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অঙ্গীকার নামা সবার জন্য প্রয়োজন হয় না।
যারা পূর্বে ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকলেও ভোটার হন নি এমন আবেদনকারীর ক্ষেত্রে অঙ্গীকার নামা প্রয়োজন হবে। ১ জন ব্যক্তির শুধুমাত্র ১ বারই ভোটার নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় করা যায়। দ্বিতীয় বার জাতীয় পরিচয় পত্র করার সুযোগ নেই। রবং ইহা একটি আইনগত অপরাধ।
আর তাই যাদের বয়স বেশি হয়েছে ও আগে ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও ভোটার হননি। তাদেরকে একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হয়। ইহা A4 সাইজের কাগজে কম্পিউটার কম্পোজ করে নিচে স্বাক্ষর করে জমা দিলে চলবে। এছাড়াও স্থানীয় ফটোকপির দোকানে এ ধরণের অঙ্গীকারনামার নমুনা পেয়ে যাবেন।
হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ
নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করার জন্য আরেক একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হচ্ছে বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রসিদ। হোল্ডিং ট্যাক্স ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনে পরিশোধ করা হয়।
এই হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদে আবেদনকারীর নাম না থাকলেও চলবে। তবে পিতা মাতা অথবা পরিবারের অন্য কোন সদস্যের নামে হলেও চলবে।
ইউটিলিটি বিলের কপি
নতুন ভোটার হওয়ার আবেদনের সঙ্গে ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে বিদ্যুৎ, পানি বা গ্যাস বিলের কপি জমা দিতে হবে। বিলের কাগজে ভোটার আবেদনকারীর নিজ নাম না থাকলেও পিতা-মাতা বা বাড়ির অন্য কোন সদস্যের নাম থাকলেও চলবে। বিলের কপি না থাকলে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের কপিও জমা দিতে পারেন।
পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি
জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধনের জন্য পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক কোন ডকুমেন্ট নয়। তবে কারও যদি কোন পড়াশুনা না থাকে অর্থাৎ শিক্ষা সনদ না থাকে সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি জমা দিতে হবে।
কোন আবেদনকারীর যদি এগুলো না থাকে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট
জাতীয় পরিচয় পত্রে নাগরিকের রক্তের গ্রুপের তথ্য যুক্ত করতে হয়। আর তাই নিকটস্থ কোন Pathology থেকে আপনার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে নিন। রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্টটির ছবি বা Scan কপি অনলাইনে আপলোড করতে হবে। এবং আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
প্রতিবন্ধী সনদ
আবেদনকারী যদি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়, তাহলে আবেদনের সঙ্গে প্রতিবন্ধী সনদ জমা দিতে হবে।
সার্ভিস আইডি কার্ড
আবেদনকারী যদি চাকরিজীবি হন, তাহলে তার সার্ভিস আইডি কার্ডের ফটোকপি আবেদনের সাথে যুক্ত করে দেবেন। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকালে পঠিতব্য শপথ বাক্যে নিজ দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের আনুগত্য প্রত্যাহারের বিষয় উল্লেখ না থাকলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের প্রয়োজন নেই।
কিন্ত যদি প্রত্যাহারের বিষয় থাকে, তাহলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের প্রয়োজন হবে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ প্রয়োজন হয় না। বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী বিদেশী নাগরিকগণের ক্ষেত্রে সুরক্ষা সেবা বিভাগ হতে প্রদত্ব নাগরিকত্ব সনদ নেওয়া আবশ্যক।
নতুন ভোটার হওয়ার জন্য উরোক্ত কাগজপত্রগুলোর মধ্যে যে সকল কাগজপত্র আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেগুলো আবেদনের সঙ্গে জমা দেয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন ডকুমেন্টেসে আমার ভিন্ন নাম ও বয়স আছে | এমতাবস্থায় কোনটা ভোটার রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে?
নাম ও বয়সের ক্ষেত্রে SSC বা সমমানের পরীক্ষার সনদে উল্লেখিত বয়স ও নাম। ভবিষ্যতে ৫ম অথবা ৮ম সমাপনী পরীক্ষার সনদ এবং গ্রহণযোগ্য হবে। কারও লেখাপড়া না থাকলে জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েও আবেদন করা যাবে।
নতুন ভোটার নিবন্ধন করার জন্য কোথায় যেতে হবে?
২ বছর পর পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারের জন্য নিবন্ধন করে থাকে। আর যদি কোন কারণে আপনি বাদ পড়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আপনাকে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে উপরের লিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। অবশ্যই আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে যদি নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার হতে চান।
শেষ কথা, নতুন ভোটার হতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন, পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র ও পিতা ব্যতীত রক্তের সম্পর্ক আছে এমন তিন জনের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। এছাড়াও ঠিকানা প্রমাণের জন্য ইউটিলিটি বিলের কপি বা জমির খাজনা রশিদ/হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ কিংবা চেয়ারম্যান বা কমিশনারের প্রত্যয়ন লাগে।
বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url