ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম
অনেক ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে। কেননা কর্মক্ষেত্রের কারণে বা অন্যান্য কোন সমস্যার কারণে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে করা জরুরী হয়ে পড়ে। কিন্তু ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে গিয়ে অনেকে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম |
সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অনেকে ভোগান্তিতেও পড়ে থাকেন। ভোটার মাইগ্রেশনের আবেদন করে খুব সহজেই ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। এই পদ্ধতিতে ভোটার আইডি কার্ডে শুধুমাত্র বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন ও ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।
ধরুন আপনি এখন বর্তমানে কোন একটি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছেন আপনি চাইলে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে অন্য এলাকায় ভোটার হতে পারবেন। তাছাড়া কেউ যদি চাই ঠিকানা সংশোধন করতে তাহলে অনলাইনের মাধ্যমে সে শুধুমাত্র বাড়ি নম্বর ও পোস্ট অফিস পরিবর্তন করতে পারবেন।
সম্পূর্ণভাবে জেলা বা উপজেলা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। নিম্নে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম ও ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য কি কি করা লাগে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হলঃ
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম | nid card address change
ভোটার এলাকা খুব সহজেই পরিবর্তন করে নেওয়া যায়। ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য আপনি যে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সেখানকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে। ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য একটি আবেদনপত্রের সাথে কিছু কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনের অফিসে জমা দিতে হয়।
নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে ভোটার এলাকা ১৩ ফরমটি পূরণ করে খুব সহজেই ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে।যদি ভোটার এলাকা ১৩ ফ্রমটি পূরণ করতে অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে কোন কম্পিউটার অথবা ফটোকপির দোকান থেকে খুব সহজেই পূরণ করে আবেদন পত্রটি জমা দিতে পারবেন।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে?
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য কিছু কাগজপত্র লাগবে। এই কাগজপত্রগুলো ব্যতীত কেউ ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে পারবেন না। কেননা ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরমের আট নম্বর কলামে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগবে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া আছে। নিম্নে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে তা উল্লেখ করা হলঃ
ভোটার স্থানান্তর প্রত্যয়ন পত্র লাগবে
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য অবশ্যই প্রত্যয়ন পত্র লাগবে। প্রত্যয়ন পত্র আপনার এলাকার নিকটবর্তী পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। একজন জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র ব্যতীত কখনোই ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
বিদ্যুৎ বিল / গ্যাস বিল অথবা পানি বিলের কপি লাগবে
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করার জন্য বিদ্যুৎ বিল গ্যাস বিল অথবা পানির বিলের কপির মধ্য থেকে যেকোনো একটি ডকুমেন্ট দিতে হবে। এই ডকুমেন্টটি আপনার নিজের নামে করা না থাকলেও বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনের নামে হলেও চলবে।
চৌকিদারী ট্যাক্স / বাড়ি ভাড়ার রশিদ / পৌর করের রশিদ লাগবে
আপনি যদি পৌরসভার আওতায় বসবাস করে থাকেন তাহলে পৌর করেন রশিদ লাগবে ও যদি ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় থাকেন তাহলে চৌকিদারী ট্যাক্স অথবা বাড়ি ভাড়া রশিদ দিলে হবে। রশিদটি পারে যে কোন একজন সদস্যের নামে করা থাকলেই হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি লাগবে
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি লাগবে। যখন আবেদনপত্রটি জমা দিবেন তখন জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি আবেদনপত্রের পিছনে পিনআপ করে দিতে হবে।
আবেদন পত্রটি জমা নেওয়ার পরে আপনার মোবাইলে দুইটি মেসেজ আসবে। প্রথম মেসেজটি আসবে আপনি আবেদনপত্রটির জমা দিয়েছেন এই কারণে এবং দ্বিতীয় মেসেজটি আসবে আপনার আবেদন পত্রটি গৃহীত হয়েছে কিনা বা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কিনা এই বিষয়ে।
যদি দেখেন আপনার আবেদনটি গৃহীত হয়ে গিয়েছে তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আবেদনটি যদি প্রত্যাখ্যান হয়ে থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে এই বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কতদিন সময় লাগে?
অনেকেই ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কতদিন সময় লাগে এই বিষয় সম্পর্কে জানেন না। ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে অনেকের সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগলেও আবার অনেকের ক্ষেত্রে ২-৩ মাসও লেগে যেতে পারে। ভোটার এলাকা পরিবর্তন হতে দেরি হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে।
ধরুন আপনি দামুড়হুদা উপজেলার একজন ভোটার এখন আপনি যদি আলমডাঙ্গা উপজেলাতে গিয়ে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেন তাহলে তারা আবার এই আবেদনটি আপনার উপজেলার নির্বাচন কমিশনের অফিসে ট্রান্সফার করবেন।
তারপরে তারা সবকিছু যাচাই-বাছাই করবে এবং প্রতিবেদনটি দেখে কাজ শুরু করবে। নির্বাচন কমিশনের অফিসে যদি অনেক প্রতিবেদন থেকে থাকে বা কর্মীদের যদি অনেক বেশি চাপ থাকে তাহলে দেরি হবে।
আর যদি কর্মীদের অনেক বেশি চাপ না থাকে তাহলে সাত থেকে দশ দিনের মধ্যেই ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদনটি গৃহীত হবে। এভাবে সাধারণত ভোটার এলাকা পরিবর্তনের সময়সীমা কম বেশি হয়ে থাকে।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফি কত টাকা?
অনেকে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে টাকা প্রদান করে থাকেন। তারা এই কাজটা অবশ্যই ভুল করেন কেননা এখনো পর্যন্ত ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য সরকার থেকে কোন ফি নির্ধারণ করা হয়নি।
এই কাজটি সম্পূর্ণ ফ্রিতেই করা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে হয়তো আপনার কাজটি দ্রুত করে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসে থাকা কর্মীরা কিছু টাকা চাইতে পারে। তবে এটা কখনোই সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নয় তাই এর জন্য কখনোই সরকার দায়ী হবে না।
তবে অনেকের ভাষ্যমতে ভোটার এলাকা পরিবর্তন বর্তমানে ২৩০ টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। যদি কেউ অনলাইনের মাধ্যমে ফি প্রদান করেন তাহলে বিকাশ রকেট ও নগদের মাধ্যমে খুব সহজেই দিতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন?
ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আপনারা হয়তো এটা জানেন যে একজন ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ডে দুইটি ঠিকানা লেখা থাকে। দুইটি ঠিকানার মধ্যে একটি হচ্ছে স্থায়ী ঠিকানা ও আরেকটি হচ্ছে বর্তমান ঠিকানা।
কোন ব্যক্তি ভোটার এলাকা স্থানান্তর ভাব পরিবর্তন করার সময় তার বর্তমান ঠিকানাটা পরিবর্তন হয়ে থাকে কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন হয় না। এক্ষেত্রে আপনাদেরকে ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন করে নিতে হবে। এটা আপনারা চাইলে নিজেরা অনলাইনের মাধ্যমে করতে পারবেন অথবা ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে গিয়ে খুব সহজেই করে নিতে পারেন।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ পূরণ?
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ পূরণ করতে হবে। আপনি যদি নিজে থেকে পূরণ করতে না পারেন তাহলে নির্বাচন কমিশনের অফিসের সামনে কম্পিউটার অথবা ফটোকপির দোকান রয়েছে তাদের কাছ থেকে নিয়ে পূরণ করতে পারবেন।
নির্বাচনে কমিশনের অফিস থেকে ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ সংগ্রহ করে পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আবেদন পত্রটির পিছনে পিন আপ করে জমা দিতে হবে। এন আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য একটি মোবাইল নাম্বারও দিতে হবে।
ভোটা এলাকার পরিবর্তন করার ফরম?
ভোটা এলাকার পরিবর্তন করার ফরম ডাউনলোড করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য কোথায় আবেদন করতে হবে?
আপনি যদি উপজেলার মধ্যে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান তাহলে নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন কমিশনের অফিসে গেলেই হবে, কিন্তু এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যদি ভোটার এলাকার ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান তাহলে যে উপজেলার ভোটার হতে চান সেই উপজেলার নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা কি সম্ভব?
এখনো পর্যন্ত অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার কোন পদ্ধতি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন চালু করেনি। ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য উপজেলা নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে সশরীরে উপস্থিত থেকে আবেদন পত্রটি জমা দিতে হবে।
শেষ কথা, আশা করি ইতিমধ্যে ভোটার এলাকা পরিবর্তন বা ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন কিছু বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url