উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার নিয়ম

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার নিয়ম বা কিভাবে উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করা যায় এর নিয়ম জানা আছে কি। স্কুল কলেজে অনেক সভায় উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার প্রথমে কথাগুলো খুবই সাবলীল ভাবে বলতে হয়। 
উপস্থিত বক্তৃতা
উপস্থিত বক্তৃতা
এবং ভেতরের অংশে কথা সুন্দর ভাবে বলার দক্ষতা থাকতে হয়। অনেকে উপস্থিত বক্তৃতা দিতে গিয়ে দ্বিধায় ভুগে থাকেন কিভাবে শুরু করবো এবং শেষের অংশে কি বলবো।

আজকের পোস্টে উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার নিয়ম বা কিভাবে বক্তব্য শুরু করবেন এবং শেষ করবেন সেই নিয়েই থাকছে আলোচনা। 

যারা এ বিষয়ে জানতে চান তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি বিস্তারিত ও মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার নিয়ম | উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে আপনাদেরকে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এতে করে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায় এবং আপনার বক্তৃতা খুবই সাবলীল হয়ে থাকে। নিচে পয়েন্ট আকারে এই বিষয়গুলো আলোচনা করা হলোঃ

১. আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে নিজের মধ্যে

বক্তৃতা শুরু করার আগে আত্মবিশ্বাস টা খুবই জরুরী। অর্থাৎ আপনার মনকে সকল সবাই আত্মবিশ্বাস দিতে হবে যে আপনি বক্তব্যটি সঠিকভাবে শেষ করতে পারবেন এবং দর্শকদের বোঝাতে পারবেন। 

যদি আপনার ভিতরে আত্মবিশ্বাস না থাকে তাহলে কোনভাবেই বক্তব্য শেষ করতে পারবেন না এবং আপনি যে সকল কথাগুলো বলবেন সে কথাগুলোও মন থেকে হারিয়ে যাবে। তাই উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে নিতে হবে। 

২. দর্শক বুঝে কথা বলার সক্ষমতা থাকতে হবে

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে দর্শক বুঝে বক্তব্য দেওয়াটা খুবই জরুরী।অর্থাৎ আপনি যে দর্শকদের সামনে বক্তব্য দিবেন তারা কোন ধরনের তথ্য পেতে চাই, কোন কথাগুলো বললে তারা আগ্রহী হবে এইগুলো প্রথমে বুঝে নিতে হবে। 

ধরুন আপনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন তাহলে তাদেরকে এই ক্ষেত্রে আপনি ক্যারিয়ার সম্পর্কে কিছু কথা বলতে পারেন এবং বাস্তবতা মূলক কিছু জ্ঞান দিতে পারেন। এতে করে তারা আপনার কথাটি মন দিয়ে শুনবে এবং এখান থেকে ভালো কিছু শেখার চেষ্টা করবে।

আবার আপনি যদি কোন বিজনেস মিটিংয়ে বক্তৃতা দিতে চান তাহলে অবশ্যই সেই ধরনের দর্শকদের টার্গেট করে তারা যে বিষয়গুলো জানতে আগ্রহী সেই বিষয়ে বক্তব্য দিতে হবে। 

৩. সাবলীলভাবে কথা বলতে হবে মনকে সাহস যুগিয়ে

আপনি যখন উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করবেন তখন অবশ্যই আপনার মনকে সাহস যোগাতে হবে যে আমি বড় মঞ্চে রয়েছি আমাকে এই ক্ষেত্রে সাবলীল ভাষায় কথা বলতে হবে। 

অর্থাৎ আমার কথা শুনে মানুষ কিছু শিখবে। তাই প্রথমে কল্পনা করে নিতে হবে কোন কথাগুলো বললে দর্শক আপনার কথার প্রতি বেশি আগ্রহী হবে।

৪. নম্রকণ্ঠে কথা বলতে হবে

বক্তব্য শুরু করার আগে অবশ্যই নিজের কন্ঠের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ দর্শকদের সামনে নম্র কন্ঠে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। আপনি যদি কথা বলতে বলতে বারবার ঘাবরিয়ে যান তাহলে আপনার বক্তব্যটি সুন্দর হবে না।

তাই বক্তব্য চলাকালীন সময়ে যদি গলা শুকিয়ে যায় তাহলে পানি খেয়ে নিতে হবে তারপর আবার বক্তব্য শুরু করতে হবে। এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে করে দর্শকরা বিরক্ত হয়।

৫. শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে 

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার সময় অনেকে আছেন যারা এক নিঃশ্বাসে অনেকখানি কথা বলে থাকেন। অর্থাৎ কথা খুবই দ্রুততার সাথে বলতে চান যার কারণে অনেক সময় কথার মাঝে ভুল হয়ে থাকে। 

এতে করে দর্শকরা বিরক্তি হয়ে থাকে এবং কথা শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই অবশ্যই ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলে কথা সুমধুর করে বলার চেষ্টা করতে হবে। যার মাধ্যমে কথাগুলো দর্শকদের কাছে আলাদা মাত্রা পাবে।

৬. বক্তব্যের মধ্যে নিজেকে বড় করা যাবেনা

অনেকে আছেন যারা উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার পর নিজেকে বড় করেন দর্শকদের সামনে।অর্থাৎ তারা কথার শুরুতেই বলে থাকেন তোমরা কি কেউ জানো আমি কে? আমার পরিচয়। 

আমি আজ তোমাদের সামনে এই নিয়ে কথা বলতে চাই। তোমরা অনেক ভাগ্যবান যে আমি তোমাদের সামনে কথা বলছি এবং তোমরা আবার কথা শোনার সুযোগ পেয়েছ। এসব কথাগুলো কখনোই দর্শকদের সামনে বলা যাবে না।

৭. দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে 

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার সময় কখনোই দুশ্চিন্তা মনের ভিতরে রাখা যাবে না। দুশ্চিন্তা মনের ভেতরে থাকলে কখনোই সাবলীল ভাবে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। 

তাই অবশ্যই বক্তব্য শুরু করার আগে আপনাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে নিতে হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনারা নিচের নিয়মে বক্তব্য শুরু করতে পারেন।

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করা সঠিক পদ্ধতি | বক্তব্য শুরুতে কি বলতে হয়

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধাপ রয়েছে যেগুলো অবশ্যই প্রত্যেক বক্তারই জানা জরুরী। নিচে এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো নিয়েই এবার আলোচনা করা হবেঃ

প্রথমেই সালাম দিতে হবে

প্রত্যেক বক্তারই বক্তব্য শুরু করার আগে সালাম দেওয়াটা জরুরী। আপনি যদি একজন মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে সর্বপ্রথম বক্তব্য শুরু করার আগে আসসালামু আলাইকুম বলে বক্তব্য শুরু করতে হবে। 

আর যদি অন্য ধর্মের হয়ে থাকেন তাহলে ধর্ম অনুযায়ী সবার কল্যাণ কামনা করে শুরু করবেন। নিচের দেওয়া দুইটি নিয়মে আপনারা সালাম দিয়ে বক্তব্য শুরু করতে পারেন। যেমনঃ

1st Step

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আজকে এখানে উপস্থিত (যারা উপস্থিত থাকবে তাদের নাম বা উপাধি (সভাপতি, চেয়ারম্যান, মেয়র) সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। 

2nd step

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আশা করি এখানে উপস্থিত সকলেই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন। তারপরে যে অনুষ্ঠান উপলক্ষে বক্তব্য দিবেন সেই অনুষ্ঠানের নাম করতে হবে। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মাননীয় ব্যক্তিদের পদবী ও নাম করে আমার ছোট ও বড় ভাই বোনকে সবাইকে আসসালামু আলাইকুম বলে বক্তব্য শুরু করতে হবে। আপনারা চাইলে এই দুইটি উপায়ে সালাম দিয়ে নিজের বক্তব্য শুরু করতে পারেন।

গল্প দিয়ে বক্তব্য শুরু করতে পারেন

পৃথিবীর অনেক বড় বড় বক্তারা উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে অনেক ছোট ছোট গল্প বলে দর্শকদের আগ্রহী করে তোলেন। অর্থাৎ শুরুতে যখন বক্তা ছোট গল্প দিয়ে শুরু করেন এতে করে শ্রোতাদের বক্তব্যের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।

তাই যে অনুষ্ঠান সম্পর্কিত বিষয়ে আপনি বক্তব্য দিবেন সেই বিষয় নিয়ে একটি ছোট গল্প শুরু করে দিতে পারেন। 

সঠিক কারণ উল্লেখ করে  বক্তব্য দিতে হবে?

ছোট গল্প বলা শেষ হয়ে গেলে আপনি যে কারণে বক্তব্য দিতে এসেছেন সেটা বলতে হবে। যেমন আসসালামু আলাইকুম আজ আমি মঞ্চে আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কিছু কথা বলতে চাই। 

অথবা আজকে আজকে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই নিয়ে আমি আপনাদের সামনে দু একটি কথা বলতে চাই। এভাবে সাধারণত আপনাদের  কথা শুরু করতে হবে।

অনুষ্ঠানটি কি কর্তৃক আয়োজিত সেটা বলতে হবে?

তারপরে অনুষ্ঠানটি কিসের মাধ্যমে আয়োজিত হয়েছে সেটি বলতে হবে। যেমন আসসালামু আলাইকুম কুড়ালগাছি  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের কিছু বলতে চলেছি।

অর্থাৎ উড়ালগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে দু একটি কথা বলতে চলেছি।

বক্তব্যটি সংক্ষিপ্তভাবে কিভাবে বলবেন?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আশা করি সকলেই ভাল আছেন।আজকে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বা (অন্যান্য অনুষ্ঠানের কথা বলবেন) আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সামনে কিছু কথা বলতে চলেছি। 

আমার সামনে উপস্থিত মাননীয় সভাপতি, মাননীয় মেয়র, এবং আরো অনেক ছোট ও বড় ভাইদেরকে জানাই আসসালামু আলাইকুম। তারপরে আপনি নিজের ভাষায় বক্তব্য শুরু করবেন। বক্তব্য শেষের দিকে আমি এই বলে আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টে যারা পড়েছেন তারা উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার নিয়ম বা কিভাবে বক্তব্য শুরু করা যায় এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। 

তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url