বেনারসি শাড়ি চেনার উপায় - বেনারসি শাড়ির ইতিহাস

বেনারসি শাড়ি চেনার উপায় যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলি আপনি শাড়ি কিনে ঠকতে পারেন। বেনারসি নামেই আভিজাত্য। বিয়ে বাড়িতে কনের প্রথম পছন্দ হচ্ছে এই বেনারসি।
বেনারসি শাড়ি
বেনারসি শাড়ি
বিয়ে ছাড়াও যে কোন জমকালো অনুষ্ঠানে শাড়ি হিসেবে বেনারসির কোন তুলনা নেই। তাই শাড়ি পছন্দ করে যেসব নারী তাদের পছন্দে বেনারসি সব সময়ই শীর্ষে। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত এই বেনারসির চাহিদা কমেনি একটুও।

এর উজ্জ্বল রঙ এবং বাহারি কারুকাজ মানুষের মন কাড়ে সবচেয়ে বেশি। আনন্দঘন মূহুর্ত যেন আরও একটু বেশি আনন্দঘন হয়ে উঠে এই বেনারসির বাহারে। তবে হ্যাঁ সুন্দর এই শাড়িটি কেনার আগে অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নয়তো এতো প্রিয় শাড়িটি কিনার সময় ঠকার সম্ভাবনা রয়েছে। আজকে আমরা জানব আসল বেনারসি শাড়ি চেনার উপায়সমহ। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া জাক বেনারসি শাড়ি চেনার উপায়সমহ।

১. আসল বেনারসি শাড়িতে আচঁলে সবসময় ছয় ইঞ্চি থেকে আট ইঞ্চি মাপের লম্বা সমান সিল্কের প্যাচ থাকে। কিন্তু মনে রাখবেন নকল বেনারসি শাড়িতে এই প্যাচ থাকে না। শাড়ি পরিধান করার সময় এই অংশটি কাধেঁর উপর দিয়ে পড়ে এজন্য এটি খুব সহজেই লক্ষ্য করা যায়।

২. মূলত বেনারসি শাড়ি চেনার জন্য খুব বেশি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু শাড়িটিকে উল্টে দেখলেই হবে। কারণ আসল বেনারসি শাড়ির উল্টা পাশে ঘন সুতা দেখা যায় যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে থাকে না। তাছাড়া নকল বেনারসি শাড়ির উল্টা পাশ একটু খসখসে হয়ে থাকে।

৩. একটি আসল বেনারসি শাড়ি সবসময় খুব উন্নতমানের সিল্ক সুতা ও ‍জরি সুতা দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এই জরি সুতা সোনালি রঙ অথবা রুপালি রঙের হয়ে থাকে। এই সব সুতা খুব দামি হয়ে থাকে তাই শাড়ির দাম ও অনেক বেশি হয়।

একটি খাঁটি বেনারসি শাড়ি তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য এবং প্রচুর সময় প্রয়োজন হয়। এজন্য একজন তাতিঁ একটি বেনারসি তৈরি করতে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় নিয়ে থাকেন।

এইসব কারণে একটি আসল বেনারসি শাড়ি খুব দামি হয়ে থাকে। অন্য দিকে মেশিনে বোনা বেনারসি শাড়িতে এসব কিছুই থাকে না তাই সেটা বাজারে অনেক কম দামে পাওয়া যায়।

সিনথেটিক কাতান একটি শাড়ি যেমনঃ পাওয়া যাবে পনেরো শত টাকা আবার কিছু কিছু শাড়ির দাম পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও বিয়ের জন্য শাড়ি তৈরি করলে ওড়না সহ সেগুলোর দাম কয়েক লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

৪. বেনারসি শাড়ি আসল নাকি নকল তা বুঝার জন্য রিং টেস্ট করা যায়। খাঁটি সিল্কের শাড়ি একটি আংটির ভিতর দিয়ে খুবই সহজে প্রবেশ করে থাকে। অন্যদিকে নকল শাড়িতে এই কাজটি একেবারেই অসম্ভব।

৫. বেনারসি শাড়ি সাধারণত সিল্ক সুতা দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। তাই শাড়ি কেনার আগে সুতা আসল সিল্কের কিনা সেটা অবশ্যই যাচাই করতে হবে। শাড়িটি হাতে নিয়ে হালকা করে ঘসা দিতে হবে। যদি তাতে গরম অনুভূত হয় তাহলে সেটা আসল সিল্ক।

৬. খাঁটি সিল্ক চেনার জন্য আরও একটি পরীক্ষা করা যায়। সিল্ক কে আগুনে পোড়ালে চুল পোড়ার মতো গন্ধ বের হয়। আর এর ছাই হচ্ছে কালো এবং ধরার সাথে সাথে গুড়া হয়ে যাবে।

৭. একটি আসল বেনারসি শাড়িতে মোঘল মোটিফ থাকবে যেমনঃ আমবি, আমরু, দোমাক , বিভিন্ন ফুলের নকশা কিন্তু নকল বেনারসি শাড়িতে এই মোটিফ থাকবে না।

বেনারসি শাড়ির ইতিহাস?

বেনারসি শাড়ির মূল উৎপত্তি হচ্ছে ভারতের উত্তর প্রদেশের বেনারস শহরে। তবে ঠিক কখন থেকে এ শাড়ি তৈরি হয়ে আসছে তা কখনো জানা যায় নি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কারণে অনেক বেনারসি তাঁতি সম্প্রদায় এদেশে এসে, তারা ঢাকায় বসতি স্থাপন করে।

এরপর আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়া পর এসব তাঁতিরা সবাই মিরপুর এলাকায় বসতি গড়ে তোলে। ধীরে ধীরে বাংলার লোকেরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাতিঁরা এই কাজ শুরু করেন। পরে বাজারে এর চাহিদা বারার সাথে সাথে নকশায় এসেছে ভিন্নতা। বেনারসি শাড়ির পরিবর্তে এর নাম হয় কাতান।

বেনারসি শাড়িতে রঙের বৈচিত্র্য?

বেনারসি শাড়িতে রঙের বৈচিত্র্যের কোন অভাব নেই। বিয়ের কনেকে লাল বেনারসি পরার জন্য সবাই কল্পনা করে থাকে। তবে লাল ছাড়াও মেরুন, মেজেন্টা, হলুদ, বেগুনি, খয়েরি ইত্যাদি রঙের উপর সোনালি ও রুপালি জরি সুতার জমকালো ও ভারি কাজ থাকে।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজকাল আরও অনেক রঙের বেনারসি বের হয়েছে। শাড়ির ধরণ এবং নকশার উপর ভিত্তি করে এর নানান নাম হয়ে থাকে। যেমনঃ
  • প্রিন্স কাতান
  • রেশমি কাতান
  • ব্রোকেট কাতান
  • পিরামিড কাতান
  • চুনরি কাতান
  • বেনারসি কসমস ইত্যাদি।
বেনারসি শাড়ির শুরুর দিকের ডিজাইন গুলো হচ্ছে পার্সিয়ান মোটিফ। এরপর এতে আসে মোঘল মোটিফ। এবং সময়ের সাথে সাথে এতে যুক্ত হয় পাবনার কিছু তাতিঁদের মোটিফ। আস্তে আস্তে এতে স্থানীয় কিছু কিছু নকশাও যুক্ত হয়।

বেনারসি শাড়ির তৈরি পদ্ধতি?

মূলত বেনারসি তৈরি করেন তাতিঁরা তাতঁ যন্ত্রের সাহায্যে। এই শাড়ি যেমন জমকালো তেমনি এই শাড়ি তৈরি প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। এর মূল উপাদান হচ্ছে কাঁচা রেশমি সুতা। পাশাপাশি এতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে জরি সুতা। এই শাড়ি তৈরি করার জন্য প্রথমে নকশা অনুযায়ী সুতা রং করা হয়ে থাকে। 

এরপর এই সুতাকে সাবান ও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকানো হয়। তারপর এই সুতা একত্রীকরণ করার জন্য পাঠানো হয় কারখানায়। এরপর এই সুতা দিয়েই চলে শাড়ি বুননের কাজ। শাড়ির ডিজাইন এবং বুনন প্রক্রিয়া অনুযায়ী শাড়ি তৈরিতে সময় লাগে।

মোটামুটি সহজ বুনন এবং ডিজাইনের একটি শাড়ি তৈরিতে একজন তাতিঁর সময় লাগে প্রায় সাত দিন। আবার খুব বেশি কঠিন কাজ ও নিখুঁত বুননের জন্য তিনজন তাতিঁর সময় লাগে প্রায় দুই থেকে তিন মাস। 

শাড়ি তৈরি করার পর শাড়িটিকে সুন্দর করে পলিশ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় তাতিঁরা দেশি রেশমি সুতার পরিবর্তে চায়না সিল্ক সুতা ব্যবহার করে থাকে।

বেনারসি শাড়ির যত্ন

বহুল আকাঙ্খিত ও দামি এই শাড়িটি কেনার পর এর যত্ন নিতে হবে খুব ভাল ভাবে। এত জমকালো নকশা এবং ডিজাইন এর শাড়িটির যত্নে ও রয়েছে কিছু ভিন্নতা। বেনারসি শাড়ি অবশ্যই সবসময় ড্রাই ওয়াশ করতে হবে। পানি এবং ডিটারজেন্ট দিয়ে কখনোই এটি ধোয়া যাবে না।

আবার শাড়িটিতে যদি কোন ভাবে কখনও দাগ লেগে যায়। তখন ওই স্থানে পানি দিয়ে ঘষা যাবে না, কারণ এতে শাড়ির ক্ষতি হতে পারে। তাই যদি কোন ভাবে দাগ লেগে তাকে তাহলে সেই দাগ তোলার জন্য প্রথমে অল্প পরিমানে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে।

এরপর সেখানে নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহার করতে হবে। এবং সেই স্থানটি টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ‍নিতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url