ক্যাডেট কলেজ কি - ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায়

ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায়গুলো জানা খুবই জরুরি। কেননা ক্যাডেট কলেজে কয়েক ধাপের প্রতিযোগিতামূলক বাছাই প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই ক্লাস সিক্সে ওঠার সময়টা থেকেই শুরু হয় তুমুল চেষ্টা।

গুণগত শিক্ষার পাশাপাশি মানসম্মত পরিবেশ এবং কঠোর নিয়ম কানুন এই প্রতিষ্ঠানকে অন্যপ্রতিষ্ঠান গুলোর থেকে আলাদা করে তুলেছে।

ক্যাডেট কলেজ কি?

প্রথমেই ক্যাডেট কলেজ সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলে নেই। বাংলাদেশে মোট ক্যাডেট কলেজ আছে বারোটি। এর মধ্যে ছেলেদের ক্যাডেট কলেজ নয়টি এবং মেয়েদের ক্যাডেট কলেজ তিনটি।

ছেলেদের জন্য চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা আয়তনের দিক থেকে সর্বাধিক বড়। আর মেয়েদের জন্য সর্বপ্রথম ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ ১৯৮২ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ক্যাডেট কলেজগুলোর মূল লক্ষ্য আসলে কি?

ক্যাডেট কলেজের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর জন্য প্রস্তুত করা। এতে যেন শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে পারে। এজন্যেই শিক্ষার্থীদের শুরু থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়।

মূলত ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করতে হয় ইংরেজি মাধ্যমে অর্থাৎ ইংলিশ ভার্সনে। এছাড়া তাদের বইসমূহ এনসিটিবি প্রণীত শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে।

ক্যাডেট কলেজে ভর্তির যোগ্যতা?

প্রধানত ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা শুরু হয় সপ্তম শ্রেণী থেকে। তাই কেউ এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে চাইলে তাকে অবশ্যই ৬ষ্ঠ শ্রেনীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। শিক্ষার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশি হতে হবে। এবং শারিরীকভাবে ঠিক থাকতে হবে। এছাড়াও সার্কুলারে আরও বেশ কিছু নিয়ম থাকে। 

আবেদন করার আগে নিয়মগুলো অবশ্যই সঠিকভাবে চেক করে নিতে হবে। আর সবাই বড় কথা হচ্ছে ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা ইংলিশ মিডিয়ামে হলেও, শিক্ষার্থী বাংলা কিংবা ইংরেজি যেকোন মাধ্যমেই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে। তবে অবশ্যই আবেদনের সময়েই ঠিক করে নিতে হবে।

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার ধাপসমূহ কি কি?

প্রধানত ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হতে গেলে শিক্ষার্থীকে কোন জটিল প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয় না। ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়া জন্য যেমনঃ

• ১ম শিক্ষার্থীকে একটি লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে হবে।
• ২য় মৌখিক পরীক্ষা অর্থাৎ ভাইভা-র জন্য উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে ডাকা হবে।
• আর মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

এই ধাপগুলোর প্রত্যেকটিতেই যদি কেউ উত্তীর্ণ হতে পারে তবেই সে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায়?

ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার প্রধান উপায় হচ্ছে ঠিকভাবে পড়াশোনা করা। ষষ্ঠ শ্রেনীতে উঠলেই শুরুর দিক থেকেই একটু একটু করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য। আর অবশ্যই বাংলা ব্যাকরণকে গুরুত্ব দিতে হবে। এবং বোর্ড বইটা ভালভাবে আয়ত্তে আনতে হবে। 

আর অবশ্যই ইংরেজি গ্রামারের উপর যথেষ্ট প্রায়োরিটি দিতে হবে। গণিতে কোন সমস্যা দেখলে তা কৌশলে সমাধান করার উপায়গুলো বুঝে নিতে হবে। এবং সৃজনশীলতা থাকতে হবে। মনে করুন শিক্ষার্থীকে যেকোন একটি টপিক দিয়ে সে বিষয়ে একটি প্যারাগ্রাফ লিখতে বলা হল।

শিক্ষার্থীকে সে বিষয়ে কমপক্ষে দশ থেকে পনেরোটি লাইন লেখার দক্ষতা থাকতে হবে। সেটা ইংরেজীতে হোক কিংবা বাংলায়। ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায়ঃ

ইংরেজীর জন্য প্রস্তুতি

প্রথমেই বলে নিয়েছি যে, ক্যাডেট কলেজে পড়তে গেলে ইংরেজীতে বেশ পারদর্শী হতে হবে। এছাড়া ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করতে হবে ইংলিশ মিডিয়ামে। এজন্য আগে থেকেই ইংরেজীতে বেসিক ধারণা থাকা চাই।

পাশাপাশি গ্রামার সম্পর্কে বেশ ভাল একটা আইডিয়া রাখতে হবে। Parts of Speech, Narration, Changing sentence এই বিষয়গুলো নিয়ে অবশ্যই কিছুটা ধারণা রাখতে হবে।

Article আর Preposition জানা খুবই প্রয়োজন। কোন একটি Topic দেয়া হলে তা নিয়ে দশ থেকে বারো লাইন লিখতে পারার মতো মানসিকতা থাকতে হবে।

ইংরেজি পারবে কি পারবো না, এমন কোন সন্দেহ থেকে থাকলে, তা অবশ্যই দূর করতে হবে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই। মানসিকভাবে বেশ দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। মনে করুন শিক্ষার্থীকে একটি ছবি দেখানে হল।

বাংলার জন্য প্রস্তুতি

ক্যাডেট কলেজে বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা দ্বিতীয় পত্র বাদে, বাকি সব বিষয়গুলো ইংরেজি ভার্সনে পড়ানো হয়। বাংলায় ভাল করতে হলে অবশ্যই ব্যাকরণের বেসিক জানতে হবে। কারক এবং বিভক্তি বুঝে নিতে হবে একটু শুরু থেকেই।

অর্থাৎ এ বিষয়গুলোকে নিয়ে শুধু একটু ঘাঁটাঘাটি করে, এগুলো সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারনা মাথায় রাখতে হবে। যাতে করে পরবর্তীতে এগুলো খুব সহজেই বোঝা যায়। 

তবে ব্যাকরণের জন্য বড়সড় কোন বইপুস্তক পড়ার দরকার নেই। সাধারণ যে নবম ও দশম শ্রেনীর বাংলা ব্যাকরণ বই আছে। সেটা সংগ্রহ করে পড়তে হবে, বেসিক গুলো বুঝে নিলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।

গণিতে বাজিমাত করতে করণীয়?

অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই আতঙ্কের এক নাম হল গণিত। কেউ কেউ ভয় পান যে, ভর্তি পরীক্ষায় কোন বই থেকে প্রশ্ন করবে? দশম শ্রেণির বই থেকেও কি কিছু প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা আছে? তবে এমনটা নয়৷

বরং ৬ষ্ঠ শ্রেনীর বোর্ড বইয়ে যে বিষয়গুলো রয়েছে, উচ্চতর ক্লাসের সেগুলোরই আপডেট করা বিষয়বস্তু থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। যেমনঃ জ্যামিতির পার্টটা একটু ভালভাবে বুঝতে হবে। সুদ-অনুপাত, লাভ-ক্ষতি কিংবা ঐকিক নিয়মের অঙ্কগুলো বুঝতে হবে।

এগুলোর পাশাপাশি বীজগণিতকে একটু গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে, বর্গ ও ঘনের সূত্রগুলোকে খুব ভালভাবে আয়ত্তে রাখতে হবে।

শারীরিক দিক থেকে

ছোট থেকে বাচ্চাকে ফিট রাখতে হবে। বয়সের সাথে সাথে যেন ওজন ও উচ্চতার সামঞ্জস্যতা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মানসিক দিক থেকে

ক্যাডেট কলেজে পড়তে চাইলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। যেকোন সমস্যা মোকাবেলা করার মেন্টালিটি রাখতে হবে।

সাধারণ জ্ঞান এর জন্য করণীয়?

সাধারণ জ্ঞান নিয়ে অনেকেরই মনে ভয় থাকে যে, ঠিক কীভাবে এই দিকটা কভার করবো। তবে ছোট থেকে অর্থাৎ নয় থেকে দশ বছর থেকেই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এতে করে বাচ্চারা কিছুটা হলেও জানতে পারে, তা হোক পত্রিকার খুঁটিনাটি বিষয়। 

এছাড়াও পড়তে শেখা মাত্রই শিশুদের ম্যাগাজিন দেয়া প্রয়োজন। যাতে বাচ্চারা ছোট থেকেই নানান ধরণের সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা পায়। কারণ ক্যাডেট কলেজে পড়াতে চাইলে আপনার বাচ্চাকে অবশ্যই ছোট থেকে সে অনুসারে গড়ে তুলতে হবে।

ক্যাডেট কলেজের বেতন কত?

অভিভাবকদের আয়ের উপর নির্ভর করে পঁচিশ শত টাকা থেকে সর্বোচ্চ বেতন বাইষ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ক্যাডেট কলেজের আসন সংখ্যা কত?

সারা বাংলাদেশে মোট বারোটি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে নয়টি ছেলেদের ও তিনটি মেয়েদের জন্য। ছয়শত আসন সংখ্যা যার মধ্যে চারশত পঞ্চাশটি ছেলেদের এবং একশত পঞ্চাশটি মেয়েদের।

ক্যাডেট কলেজে ভর্তির সময়?

প্রত্যেক বছরের নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর মাসে অর্থাৎ বছরের শেষ সময়টাতে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার সার্কুলার বের হয়।

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার আদ্যোপান্ত?

ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য যে পরীক্ষা নেয়া হয়, তাতে বছরের শেষে কিছু না কিছু হলেও পরিবর্তন দেখা যায়। তবে সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার মানবনন্টন হলঃ

• বাংলা- ১০০ নম্বর
• ইংরেজী- ১০০ নম্বর
• গণিত- ১০০ নম্বর
• বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান৷ আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) ও সাধারণ জ্ঞান এই চারটি বিষয় মিলিয়ে- ৪০ নম্বর।

ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করতে গেলে অবশ্যই ষষ্ঠ শ্রেনীর বোর্ড বইটা খুব ভাল করে পড়তে হবে। আর ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার জন্য অবশ্যই নিজেকে শারীরিকভাবে ফিটফাট করে তুলতে হবে শুরু থেকেই।