ক্যাডেট কলেজে পড়ার খরচ - ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবিধা

এসএসসি পাশ করার পর, সবার পরবর্তী গন্তব্য থাকে কলেজ। আবার, অনেকের স্কুলেই এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকার কারণে স্কুলই হয়ে উঠে কলেজ। আবার এর মধ্যে অনেকেই ক্যাডেট কলেজে পড়ার স্বপ্ন লালন করে।
রংপুর ক্যাডেট কলেজ
রংপুর ক্যাডেট কলেজ
প্রথমেই বলে নেই, ক্যাডেট কলেজগুলো সামরিক বাহীনির দ্বারা পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ক্যাডেট কলেজগুলোর মূল লক্ষ্যই সামরিক বাহীনিতে যোগ্য কর্মকর্তা তৈরি করা।

সুতরাং, এসব কলেজে যে কড়া নিয়ম কানুন থাকে এ বিষয় কারো কোন প্রশ্ন থাকবে না। মজার বিষয় হল ক্যাডেট কলেজে এসব কড়া নিয়ম কানুনের মধ্যে আপনি এমন সব সুযোগ সুবিধা পাবেন।

আর অন্য কোথাও পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। আপনারা যারা ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবিধা জানেন না। অথচ ক্যাডেট কলেজে পড়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে থাকছে ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবিধা কি?

ক্যাডেট কলেজগুলোকে একটি জিনিসের সাথে খুব ভালোভাবে তুলনা করা যায়। আর সেটা হল নদী। শুধু নদী বললে ভুল হবে খরস্রোতা নদী। ধরেন আপনি একবার নদীতে পড়ে গেলেন, আপনি সাঁতার জানুন অথবা নাই জানুন, নদীর ঢেউ আপনাকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাবেই যাবে।

ঠিক তেমনি ক্যাডেট কলেজে একবার পড়ার সুযোগ পেয়ে গেলে, আপনার ইচ্ছা থাকুক বা নাই থাকুক আপনাকে এগিয়ে যেতেই হবে। আপনার যদি এগিয়ে যাওয়ার মন মানসিকতা নাও থাকে, সামনে এগোতে আপনি বাধ্য। আর এটাই হল ক্যাডেট কলেজের সবচেয়ে বড় সুবিধা।

ধরুন, আপনি কোন একটি ক্ষেত্রে আটকে গেলেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আপানাকে সমনে এগিয়ে যেতে বাধ্য করবে ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরা। এটার একটা দারুন উদাহরণ হলঃ

ধরুন আপনার বন্ধুরাসহ একটি দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু করলেন। এখন আপনি দৌড় প্রতিযোগিতার মধ্যে পিছিয়ে গেলেন অথবা পড়ে গেলেন। এক্ষেত্রে আপনার বন্ধুরা কিন্তু কখনোই আপনাকে ফেলে সামনে দৌড় দিবে না।

আপনি যদি পিছিয়েও যান, অথবা অন্যকিছু হয় আপনাকে নিয়ে তবেই তারা যাবে। সেখানে গেলে অন্তত সহনশীলতার বিষয়টুকু খুব ভালভাবে আপনি শিখতে পারবেন। ক্যাডেট কলেজে পড়লে আপনি সকল দিক দিয়ে অবশ্যই এগিয়ে যাবেন।

যেমনঃ পড়াশোনা, খেলাধুলা, ক্রীড়া, বিতর্ক, আবৃত্তি সকল কিছুর জন্যই আছে একটা এক্সট্রা সুবিধা। আপনার ফজর নামাজের মাধ্যমে সকাল শুরু হবে, এবং এশার নামাজের মাধ্যমে দিন শেষ হবে। অসাধারণ এক শৃঙ্খলাবদ্ধ আনন্দময় জীবন পাবেন।

ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবিধা কি কি?

ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবিধা সম্পর্কে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও মানসম্মত উপায়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। যা শিক্ষার্থীকে দারুনভবে আকর্ষণ করে তুলে। এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর কিছু গুন দারুণভাবে বিকশিত হয়।

যেমনঃ দক্ষতা অর্জন করে, দৃঢ় চরিত্র গঠিত হয়, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে, মানবিক গুনাবলি সমূহ অর্জন করতে সহায়তা করে।

এছাড়াও সুশৃঙ্খল তৈরি করতে সাহায্য করে, কমান্ড এবং নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যাবতীয় গুনাবলি অর্জন করতে সাহায্য করে ও সাহসী হয়ে উঠতে সহায়তা করে।

সর্বোপরি একজন সর্বাত্মক নৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যক্তিত্ব গঠনে একজন শিক্ষার্থীকে ক্যাডেট কলেজগুলো দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে।

বিখ্যাত মানুষদের বিচরণ ক্ষেত্রে?

বাংলাদেশ ব্যাংক এর গভর্নর আতিউর রহমান, মননশীল কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান, সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া এর মত অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিচরণক্ষেত্রে আমাদের এই ক্যাডেট কলেজ।

আর এসব বিখ্যাত মানুষদের বিচরণ ক্ষেত্রে আপনি যখন প্রবেশ করবেন, তখন আপনার বিখ্যাত হওয়ার সুযোগ তেমন একটা বেশী দূরে থাকবে না।

পড়াশোনার পদ্ধতি কি রকম?

ক্যাডেট কলেজে আপনারা সপ্তম শ্রেণী থেকে এসএসসি পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারবেন। কলেজে প্রয়োজনীয় সমস্ত অধ্যায়ন অথবা ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং করে ক্যাডেটদের তাদের পছন্দের যেকোন ক্যারিয়ারের জন্য তাদের যোগ্যতা বিকাশে উৎসাহিত করা হয়।

এছাড়া ক্যাডেট কলেজের জন্য অনেকের করা কমন একটি প্রশ্ন হল যে এখানে কি আমি ইংলিশ ভার্সনে পড়তে পারবো? হ্যাঁ অবশ্যই আপনারা ক্যাডেট কলেজে ইংলিশ ভার্সনে পড়তে পারবেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সংস্করনকৃত ইংরেজি সিলেবাস অনুযায়ী আপনি এখানে ইংলিশ ভার্সনে পড়তে পারবেন। ক্যাডেট কলেজগুলোতে আপনি সবসময়ই কো কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এর অনেক সুযোগ সুবিধা পাবেন।

এছাড়া এখানে আপনি হোস্টেল, ক্যান্টিন, ব্যক্তিগত হসপিতাল, লাইব্রেরি, স্পোর্টস ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা পাবেন। তবে ক্যাডেটরকে তাদের নিজের হেফজাতে টিভি সেট, মেবাইল ফোন, রেডিও, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি রাখার অনুমতি নেই। কর্তৃপক্ষ থেকে দেয়া এসব নিয়ম অবশ্যই মানতে হবে।

কো কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস

আবৃত্তি

ক্যাডেট কলেজে আবৃত্তির সকল ধরনেরই সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ক্যাডেট কলেজে প্রত্যেককে তাদের যোগ্যতা উপস্থাপন করতে হয়। যার মধ্যে যে গুন রয়েছে তা তুলে ধরতে হয়। এখন আপনি যদি আবৃত্তিতে ভাল হয়ে থাকেন অবশ্যই আপনাকে এর জন্য এক্সট্রা সুবিধা দেওয়া হবে।

আপনার যেসব বিষয় একটু দূর্বলতা থাকবে, সেটুকুকে কাটিয়ে ওঠানোর জন্য আপনাকে দিয়ে বারবার চেষ্টা করানো হবে। আপনি যখন পারদর্শী হয়ে উঠবেন তখন আপনাকে ভাল যে কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানো হবে।

যেহেতু ক্যাডেট কলেজগুলো সকল ধরনের প্রতিযোগিতার খবর সব সময় রাখে, তাই আপনি সহজেই যেকোন প্রতিযোগিতায় যোগদান করতে পারবেন।

বিতর্ক

এটা হল সবচেয়ে বড় ধরনের একটি সুবিধা। আমরা সাধারণত যারা জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করি। দেখা গেল ক্লাসে ১০০ জন স্টুডেন্ট থাকলে এর মধ্যে একজন বিতর্কে খুব পারদর্শী। তবে আর তেমন কেউ নেই, কিংবা যদি থেকেও থাকে তবে তারা যোগদান দেওয়া জন্য কেউ আগ্রহী নয়। 

এতে করে ১০০ জনের মধ্যে সেই একজনের গুনটুকুও চাপা পড়ে যায়। কিন্তু ক্যাডেট কলেজগুলোতে একাধিক বিতর্ক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দেখা গেল যেহেতু ক্যাডেট কলেজগুলোতে নিয়মিত সব বিষয়ের জন্য ক্লাস করা হয়। সেখানে অনুশীলন করানো হয়।

তাই সবার মাঝে আত্মবিশ্বাসটাও থাকে অনেক বেশি। আর তখন আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে একটি দল গঠন করে অংশ নিতে পারবেন বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিতর্ক এর মঞ্চ হল বিটিভি এর মঞ্চ। 

এই বিটিভি এর মঞ্চে আপনি বড় বড় বিতার্কিকে হারিয়ে চাইলেই অনেক দূরে এগোতে পারবেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজের অনেক অনেক বিতার্কিক বিটিভির মঞ্চে পৌঁছে ছিনিয়ে নিয়েছেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব।

সাহিত্য ও সংস্কৃতি

বক্তৃতা দেয়া, সঙ্গীত চর্চা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত ও কুরআন তিলওয়াতের মত বিভিন্ন কাজের সুযোগ রয়েছে।

হাসপাতাল সুবিধা

ক্যাডেট কলেজে আপনার কোন ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হলে আপনার জন্য আছে ক্যাডেট কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল। আপনি এখান থেকেই চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। মোট কথা সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা রয়েছে ক্যাডেট কলেজ।

হোস্টেল বা হাউজ

আপনার থাকার জন্য রয়েছে হোস্টেল এটা যেহেতু জানা কথা, তাহলে এটা বলার প্রয়োজন নেই।

ডাইনিং হল ও ক্যান্টিন

খাওয়া দাওয়া করার জন্য রয়েছে ডাইনিং হল। এছাড়াও আপনার প্রয়োজনীয় যেকোন কিছু পেয়ে যাবেন ক্যান্টিনে। এখান থেকেই আপনি সমস্ত কিছু কিনতে পারবেন।

লাইব্রেরি, ল্যাব ও জাদুঘর

ক্যাডেট কলেজের লাইব্রেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে বই। এখান থেকে আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী বই নিয়ে পড়তে পারবেন। এছাড়াও কম্পিউটার ও সায়েন্স ল্যাব রয়েছে। জাদুঘরও পাবেন আপনি ক্যাডেট কলেজে পড়লে।

বিনোদন

ক্যাডেট কলেজে বিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন কিছু। যেমনঃ মুভি দেখা। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাবের কারনে এখানে এমনিতেই বিনোদনের সুযোগ পাওয়া যায় অনেক। আর সবচেয়ে বড় যে সুবিধা সেটা তো সর্বপ্রথমই আলোচনা করলাম। পড়াশোনা করার জন্য ক্যাডেট কলেজ আসলেই অনেক ভাল।

স্পোর্টস

খেলাধুলার জন্য রয়েছে বিশাল মাঠ। এখানে আপনি ভলিবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, টেবিল, টেনিস, ক্যারাম, দাবা ইত্যাদি খেলতে পারবেন। এছাড়াও ক্রিকেট, ফুটবল সহ সব ধরনের খেলাধুলার জন্যও রয়েছে সুযোগ সুবিধা।

এখানে সকল কিছুই নিয়মিত অনুশীলন করানো হয়। ইনডোর থেকে আউটডোর, ক্রীড়া থেকে সাংস্কৃতিক সব কিছুই এখানে নিয়মিত চর্চা করা হয়।

চমৎকার পড়াশোনার পরিবেশ এখানেই?

আপনারা যদি পড়াশোনাতে সবচেয়ে ভাল করতে চান, তবে সবার আগে আমি বলব ক্যাডেট কলেজের কথা। এখানে আপনারা প্রত্যেকটা বিষয়ে স্পষ্টভাবে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। ক্যাডেট কলেজে দক্ষ শিক্ষক দ্বারা প্রতিটি ক্লাস পরিচালনা করা হয়। 

মূলত আপনি যদি কোন একটি বিষয়ে কোন পড়া না শিখে থাকেন, তবে একটি এক্সট্রা ক্লাসের মাধ্যমে সেই পড়াটি আপনাকে আবার বুঝিয়ে দেয়া হবে। তাছাড়া এখানে যেহেতু ফ্রেন্ডরা একসাথে থাকে তাই তারাও আপানকে নানানভাবে সাহায্য করতে পারবে।

ক্যাডেট কলেজে পড়ার খরচ কত?

আসলে ক্যাডেট কলেজে পড়ার খরচ নির্দিষ্ট করে কোথাও বলে দেয়া নেই। সাধারণত পিতা মাতার আয়ের উপর ভিত্তি করে ক্যাডেট কলেজগুলো বেতন নিয়ে থাকে। ধরেন আপনার পিতা যদি একজন রিক্সাওয়ালা হয়, তাহলে আপনার কাছ থেকে কলেজ কতৃপক্ষ নিবে ১,৫০০ শত টাকা।

আর যদি আপনার পিতা একজন সচিব হয়, তাহলে আপনার কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১৫,০০০ হাজার টাকা নিতে পারে। আবার আপনার পিতা মাতা যদি একজন শিল্পপতি হয় তাহলে আপনার কাছ থেকে ২৫,০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতে পারে। সাধারণত এর বেশী কোন বেতন নেয়া হয় না। 

আর ক্যাডেট কলেজে পড়ার জন্য, কোন ভর্তি ফি দেওয়া লাগে না। এছাড়াও ক্যাডেট কলেজ কতৃপক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে টিশন ফি দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যাদের টাকা পয়সার সমস্যা আছে তাদের ক্যাডেট কলেজে পড়া নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না।

ধরেন আপনার পিতা অনেক টাকা ইনকাম করে, কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর দেখা গেল আপনার পিতার বেতন খুব কমে গেছে। তাহলে আপনার কলেজের বেতনও কম করে নিবে কলেজ কতৃপক্ষ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url