ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা করার নিয়ম

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা করে ইনকাম করতে হলে আপনাকে তেমন কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না। এমনকি আপনি যদি চান তাহলে যেকোনভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ইনকাম করার অনেক ভালো একটি উপায় এটি। 
ফ্লেক্সিলোড
ফ্লেক্সিলোড
আপনি যদি একটি পার্ট টাইম কাজ করে ইনকাম করতে চান তাহলে আপনার জন্য ফ্লেক্সিলোড ব্যবসাটি লাভজনক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। তাহলে চলুন ফ্লেক্সিলোড ব্যাবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা কি?

ফ্লেক্সিলোড এর সাথে নিশ্চই আপনারা সকলেই পরিচিত। Flexiload মানেই হচ্ছে অন্যের মোবাইলে টাকা লোড করা। ফ্লেক্সিলোড ব্যাবসা মানে অন্যের সিমে টাকা রিচার্জ করার পদ্ধতি। 

যখন কিছু টাকা উপার্জন করার কিংবা মুনাফা লাভের আশায় আপনি অন্য কারো সিমে রিচার্জ এর ব্যবসা শুরু করবেন তখন সেটিকে বলা হবে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা। বর্তমানে প্রায় সবার ঘরে ঘরে মোবাইল ফোনের পাশাপাশি এক জনের প্রায় ২/৩ টি করে সিম থাকে। 

যার ফলে তাদের কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য রিচার্জ করার প্রয়োজন হয়। ছোট বড় যেকোন মানুষ এই ব্যবসা করতে পারেন।

কিভাবে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা শুরু করবেন?

flexiload বা টাকা লোড এর ব্যাবসা শুরু করতে হলে আপনার এই ব্যাবসা সম্পর্কে বেসিক কিছু ধারণা থাকতে হবে, সেগুলো হলোঃ

সঠিক স্থান নির্বাচন

যদি আপনি সল্প পুঁজিতে ফ্লেক্সিলোড এর ব্যাবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই একটি ভালো স্থান নির্বাচন করতে হবে। শুধুমাত্র রিচার্জ এর ব্যবসার ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগেই আপনাকে একটি সঠিক স্থান বেছে নিতে হবে।

কিন্তু এক্ষেত্রে ফ্লেক্সিলোড এর ব্যাবসার ক্ষেত্রে আপনাকে এমন একটি জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে অনেক মানুষজন থাকে।লোকালয় বা জনসমাগম বেশি এমন জায়গায় আপনার এই ব্যবসা শুরু করতে হবে। 

এই ব্যবসাটি করে লাভবান হতে হলে আপনার টাকা সেল করতে হবে অনেক, যার ফলে আপনার ক্রেতার প্রয়োজন। তাই চেষ্টা করতে হবে মার্কেট এর একদম সামনের দিকে দোকান দেওয়ার। 

বড় কোনো মার্কেট এর পাশে হলে সব থেকে বেশি ভালো হয়। তবে যাতে সকলের নজরে থাকে এমন জায়গা বেছে নিতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স

মূলত সকল ব্যবসায় শুরু করার আগে একটি ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর তাই একইভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে হলেও আপনার একটি ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হবে। 

দোকানের মালিক এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া কাগজ, ভোটার আইডি সহ যাবতীয় কাগজপত্র যা লাগে সেগুলো দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করিয়ে নেবেন।

ফ্লেক্সিলোড এর জন্য সিম

ফ্লেক্সিলোড ব্যাবসা করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সিম ক্রয় করতে হবে ৫ টি। গ্রামীণ, বাংলালিঙ্ক, রবি, এয়ারটেল, ও টেলিটক। ফ্লেক্সিলোড এর ক্ষেত্রে মূলত এই ৫টি সিমে আপনি রিচার্জ করে দিতে পারবেন। অন্যান্য সিম গুলো আপনার এলাকাতে কেও ব্যাবহারকারী থাকলে সেটিও রাখতে পারেন।

কারণ বাংলাদেশে ৫টি সিম বেশি ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে গ্রামীণ সবথেকে বেশি জনপ্রিয়, এরপর রয়েছে বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল এবং টেলিটক। ৫টি সিমের রিচার্জ আপনি রাখতে পারেন আপনার কাছে।

৫টি আলাদা মোবাইল সেট

যেহেতু আপনি ৫ সিম ব্যবহারকারীদের ফ্লেক্সিলোড করে দিবেন সেহেতু আপনি পাঁচটি সিমের জন্য পাঁচটি মোবাইল ফোন রাখতে পারেন আপনার কাছে। এক্ষেত্রে যেকোনো কম দামি সেট আপনি ফ্লেক্সিলোডের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার শুরুতে যা যা লাগবে?

একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে। মুনাফা লাভ করতে হলে ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা এর ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিনিয়োগ আপনার করতে হবে না। কম পুঁজিতে আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেই শুরুতে কি কি খরচ আপনার করতে হবে।

১. বাংলাদেশে মূলত গ্রামীণ, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল, টেলিটক এই ৫ টি সিম একটু বেশি চলে। তাই এই ৫ টি কোম্পানির ফ্লেক্সিলোড ব্যাবসা করার ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে ৫ টি মোবাইল সেটের। ৮০০-১০০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি ভালো সেট আপনি পেয়ে যাবেন।

তাহলে ৮০০ টাকা করে একটি সেট এর দাম হলে ৫ টি মোবাইল সেটের দাম হবে ৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে যদি ১ হাজার টাকা করে একটি সেট এর দাম হয় সেক্ষেত্রে ৫ টি সেট এর দাম হবে ৫ হাজার টাকা। যেহেতু রিচার্জ এর জন্য আপনার মোবাইল দরকার, তাই কমদামী সেট হলেও হবে।

২. মূলত ৫ টি সিম কোম্পানি যেহেতু ভালো চলে তাই এই সিম গুলোতে লোড বেশি হয়। তবে আপনার এলাকাতে যে সিম গুলো মানুষ বেশি ব্যাবহার করে সেগুলো নিয়ে আপনি রিচার্জ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে যদি ৫টি সিমের ব্যাবসা আপনি করতে চান তাহলে আপনাকে ৫টি কোম্পানি থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সিম ক্রয় করতে হবে।

সিম নেওয়ার সময় আপনি তাদের থেকে বিভিন্ন অফার সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। ফ্লেক্সিলোড সিম পাওয়ার জন্য আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর যাবতীয় কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করবেন।

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায় লাভ কেমন | বিকাশ ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ের কমিশন সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ সময় ১ হাজার টাকা সেল করলে ২৮-৩০ টাকা করে কমিশন দেওয়া হয়ে থাকে সকল সিম কোম্পানি থেকে।তাহলে আপনি ১ হাজার টাকা রিচার্জ করার জন্য পেয়ে যাবেন ২৮-৩০ টাকা।

এক দিনে যদি ১০ হাজার টাকা সেল করতে পারে। সেক্ষেত্রে ১০×৩০ ৩০০ টাকা কমিশন আপনি পেয়ে যাবেন। তবে এইখানে বিভিন্ন সিম কোম্পানি বিভিন্ন সময় নানান কমিশন দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ধরুন আপনি যদি ৩৪৪ টাকা রিচার্জ করিয়ে দেন কাউকে তাহলে এর জন্য আপনি ২০ টাকা পেয়ে যাবেন। 

সকল সিম কোম্পানি থেকে এইরকম অফার আপনি পেয়ে যাবেন। তবে শুধুমাত্র ফ্লেক্সিলোড ব্যাবসা করে ততটা বেশি আপনি লাভ করতে পারবেন না। তাই চেষ্টা করুন অন্য কোন ব্যবসায় এর সমন্বয়ে এই ব্যবসাটি করার। যেমনঃ সিম বিক্রি, বিকাশ, রকেট ইত্যাদি ব্যাবসা আপনি রিচার্জ এর সাথে করতে পারবেন।

ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা কেন লাভজনক?

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ঘরে ঘরে একাধিক মোবাইল ব্যাবহার করা হয়। যার ফলে যোগাযোগের বিষয়টি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল এর মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কল করতে হলে অবশ্যই মোবাইলের সিমে পর্যাপ্ত পরিমান ব্যালেন্স থাকা লাগবে।

যার ফলে মোবাইলে থাকা সিমটি চালু রাখার জন্য এবং নিজের প্রিয় জনদের সাথে কথা বলতে অবশ্যই সবাই তাদের মোবাইলে রিচার্জ করে। আর তাই বর্তমানে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসাটি লাভজনক। বাংলাদেশে অনেক ধরনের  ক্ষুদ্র ব্যবসার মধ্যে একটি হলো এই ব্যবসাটি।

কিন্তু আপনি যদি সঠিক নিয়মে সঠিক জায়গায় এই ব্যাবসা পরিচালনা করতে পারেন তাহলে আপনি অনেকটা লাভবান হবেন। এছাড়া শুধুমাত্র ফ্লেক্সিলোড না করে, বিভিন্ন কোম্পানির সিম বিক্রি এবং অন্যান্য কিছু বিক্রি করতে পারেন আপনি। 

অন্য কোন ব্যবসায়ের পাশাপাশি এ ব্যবসা করলে বেশি লাভবান হতে পারেন। বর্তমানে ফ্লেক্সিলোডের দোকান যেহেতু অনেক সেহেতু শুধুমাত্র ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করলে ততটা লাভবান হবেন না। চেষ্টা করুন পাশাপাশি অন্য কিছু করার।

বিকাশ থেকে ফ্লেক্সিলোড করার নিয়ম?

বিকাশ থেকে ফ্লেক্সিলোড করে আপনি কোনভাবেই ভালো কিছু করতে পারবেন না। কেননা আপনি বিকাশ থেকে মোবাইল রিচার্জ বা ফ্লেক্সিলোড করে ভালো কমিশন পাবেন না। তাই আপনার জন্য সব থেকে ভালো হয় কোন সিম অপারেটর কোম্পানির সাথে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করা। 

এতে করে আপনি ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার পাশাপাশি বিকাশের ব্যবসা করতে পারেন। তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি এই ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখতে পারবেন। 

আমাদের শেষ কথা

বন্ধুরা আজকে আমরা ফ্লেক্সিলোড ব্যাবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। তাহলে আপনি যদি চাইছেন একটি ছোট খাটো ব্যাবসা করে কিছু টাকা রোজগার করতে, আপনার জন্য সেরা উপায় হচ্ছে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা করা।

তেমন কোনো কষ্ট ছাড়া আপনি অন্য জনের মোবাইলে টাকা লোড করার মাধ্যমে ব্যবসা করতে পারবেন। ধীরে ধীরে এই ব্যবসাটি আপনি অনেক বড় করতে পারবেন। এই ছিল মূলত আজকের আর্টিকেলে। কোনোকিছু বুঝতে অসুবিধা হলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url