চা পাতার ব্যবসা করার নিয়ম

বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে অনেক নতুন নতুন ব্যবসা পদ্ধতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়িক ধরনের এসেছে নানা ধরনের অনেক পরিবর্তনও। মানুষ এখন চাকরির চেয়ে ব্যবসার দিকে বেশি ঝুঁকছে। 

কেননা ব্যবসাতে তারা স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবে। বর্তমানে আমাদের দেশের চাকরির যে অবস্থা মানুষ নিজেতাদের জীবন চালানোর জন্য কেউ কেউ ব্যবসাকে ফুলটাইম ক্যারিয়ার হিসেবে ধরে নিয়েছে।  
চা পাতার ব্যবসা করার নিয়ম
চা পাতার ব্যবসা করার নিয়ম
আর সকল ব্যবসা গুলোর মধ্যে চাপাতির ব্যবসা হচ্ছে খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। বর্তমানে চাপাতির ব্যবসা করার মাধ্যমে অনেক ব্যবসায়ী তাদের ক্যারিয়ার করতে পেরেছেন এবং পরিবর্তন করতে পেরেছেন তাদের ভাগ্য। 

চাপাতির ব্যবসা যদি সঠিকভাবে কেউ করতে পারে তাহলে অবশ্যই এই ব্যবসার মাধ্যমে সে ভালো কিছু আশা করতে পারে। আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করব যে আপনারা কিভাবে চাপাতির ব্যবসা করবেন এবং চাপাতির ব্যবসায় লাভ কেমন।

চা পাতির ব্যবসা?

চাপাতির ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাদেরকে অবশ্যই চায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে হবে। মানুষ কোনটা বেশি পছন্দ করেন এবং কোনটা বেশি প্রিয় সেগুলো আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে।

চা হলো মূলত একটি প্রাচীন পানীয়। প্রথমদিকে চাপাতার প্রচলন শুরু হয় চীন দেশ থেকে।তারপর সময়ের সাথে সাথে একটু একটু করে আমাদের সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এ প্রাচীন পানিওটি।

আর তাদের সাথে তাল মিলিয়ে থেমে নেই আমাদের বাংলাদেশও। চা পাতা দেখতে একরকম হলে চা পাতার কুড়ি থেকে তৈরি হয়ে থাকে অনেক ধরনের চা। 

যেমন ব্লাক টি, গ্রিন টি,হোয়াইট টি, বিভিন্ন ধরনের চা তৈরি করা যায় বর্তমানে। তাছাড়া ব্লাকটির মধ্যেও অনেক ভাগ রয়েছে। আশা করি চা এর পরিচিতি সম্পর্কে আপনারা কম বেশি যায় জানলেন ব্যবসা করার জন্য এটি যথেষ্ট।

চা পাতির ব্যবসা করার জন্য যা যা লাগবে?

আমাদের দেশের সকল ধরনের চা পাতা বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আপনি যাই করুন না কেন অবশ্যই সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী আপনাকে চলতে হবে। আপনি যখন চাপাতি বিক্রি করার কথা ভাববেন তখন অবশ্যই আপনাকে খুচরা এবং পাইকারি লাইসেন্স নিতে হবে। 

আর এটি সাধারণত আপনি যদি মনে করেন অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে খুব সহজেই দিতে পারবেন। চা পাতার ব্যবসা লাইসেন্স করতে হলে আপনাকে যা যা করতে হবেঃ

১. ভোটার আইডি কার্ড
২. ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স
৩. পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৪. দোকানের ঠিকানা
৫. আপনার গোডাউনের ঠিকানা
৬. একটি ইমেইল এড্রেস
৭. একটি ফোন নাম্বার
৮. আপনার একটি স্বাক্ষরসহ ২৫০০ টাকা লাগবে

আপনার এই সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মকানুন সব পূরণ করতে হবে। তারপরে বাংলাদেশ চা বোর্ড যদি আপনার সবকিছু ঠিকঠাক পাই তাহলে সেখান থেকে আপনার একটি লাইসেন্স প্রদান করবে এবং লাইসেন্সটি আপনার প্রতি বছর রিনিউ করা লাগবে।

আপনি যদি চা পাতার ব্যবসা করতে চান মার্কেটপ্লেসে তাহলে অবশ্যই আপনার লাইসেন্স লাগবে এখান থেকে তাছাড়া আপনি ব্যবসা করতে পারবেন না।

চাপাতার পাইকারী ব্যবসা করতে যা যা প্রয়োজনঃ

আপনি যদি চাপাতির পাইকারী ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনাকে বাংলাদেশ সাপোর্ট থেকে অনেক বড় বড় লাইসেন্স নিতে হবে। যেমনঃ

১. বিডার লাইসেন্স
২. ব্লেন্ডিং লাইসেন্স
৩. ব্রোকার লাইসেন্স
৪. আমদানি লাইসেন্স ও রপ্তানি লাইসেন্স
৫. বিএসটিআই লাইসেন্স ও ট্রেডমার্ক

বাংলাদেশ চা বোর্ড শুধু ৬টি লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। তাই অবশ্যই চাপাতির ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে এসব ভালো করে জেনে নিতে হবে এবং ব্যবসা করতে হবে যেন পরবর্তীতে কোন সমস্যা না পড়তে হয়। 

এরপর যখন আপনি ঢাকায় ধাপে সকল ধারণা পেয়ে যাবেন তখন লাইসেন্স নিয়ে নিজেই শুরু করে দিতে পারেন আপনার ব্যবসা। 

চাপাতি কোথায় থেকে কিনবেন?

অনেকে ব্যবসা করবেন বলে ঠিক করে নেন কিন্তু চাপাতি কোথা থেকে ক্রয় করবেন সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। বাংলাদেশের অসংখ্য চা কোম্পানি বাজারজাতকরণ করছে। 

আপনি অবশ্যই এই ক্ষেত্রে ভালো মানের চা পাতা কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন আকারে বা এজেন্ট বা ডিলার দিয়ে বিক্রি করতে পারেন।তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি চা কোম্পানিঃ

ইস্পাহানি চা কোম্পানি

ইস্পাহানি চা কোম্পানির চায়ের কথা তো আপনারা সকলেই জানেন। চায়ের কথা যখন আসবে তখন ইস্পাহানি চা এর কথা তো হবেই। সারা বাংলাদেশে ইস্পাহানি চা কোম্পানি রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

ইস্পাহানি চা কোম্পানি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটি চা কোম্পানি। আপনি চাইলে আপনার জেলার যে কোন একটি কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চাপাতি বিক্রি করতে পারেন।

সিলন চা কোম্পানি

বর্তমানে সিলন চা কোম্পানি তাদের তা বাজারজাত করা শুরু করেছে। এই কোম্পানিটি মূলত আবুল খায়ের গ্রুপের একটি কনজ্যুমার প্রতিষ্ঠান।আপনি চাইলে সিলনের চা পাতা ক্রয়ের ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চাপাতির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

রেবনল চা কোম্পানি

রেবনল চা কোম্পানি এটি বাংলাদেশের চা পাতা জগতের দারুন একটি ব্র্যান্ড। এটি সাধারণত সরাসরি সিলেট থেকে পরিচালিত হচ্ছে। আপনি চাইলে সরাসরি রেবনল চা কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ডিলার ও ডিপো মূল্যে চা-পাতা ক্রয় করে বাজারজাতকরণ করে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

নাম্বার ওয়ান কোম্পানি

নাম্বার ওয়ান চা কোম্পানি বাংলাদেশের খুবই পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি চা কোম্পানি। নাম্বার ওয়ান চা কোম্পানি চায়ের সাথে দুধ ও বাজারজাতকরণ করে থাকে। আপনি চাইলে এর সাথে কমিশন ভিত্তিক বা ডিলার নিয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন এবং চায়ের ব্যবসা করে লাভবান হতে পারেন।

তাছাড়া বাংলাদেশের আরো অনেক ছোট ছোট চা কোম্পানি রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে এগুলো হলো বাংলাদেশের শীর্ষ এবং নামকরা কয়েকটি চা কোম্পানি।

চাপাতির ব্যবসায় পুঁজি কেমন লাগবে?

আপনি যে ব্যবসায় করুন না কেন অবশ্যই আপনার সেই ব্যবসার জন্য মূলধনের দরকার হবে। আপনি এই ক্ষেত্রে যত বেশি মূলধন খরচ করবেন এবং যত পরিশ্রম করবেন ততই আপনার লাভের পরিমাণটা বেশি হবে।

তার পরেও আমার ধারণা মতে আপনাদেরকে অল্প কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি যে কত টাকা মূলধন লাগতে পারে। আপনি যে কোম্পানি থেকেই চাপাতি সংগ্রহ করুন না কেন অবশ্যই আপনাকে 50 থেকে 100 কেজি চাপাতি আপনাকে নিতে হবে।

৫০ কেজি চা পাতির ডিলার মূল্য যদি এখন ৫০*৩০০ হয় তাও ১৫০০০ টাকা।এবার আপনাকে এটি তিনগুণ করতে হবে কেননা একটি চালান আপনার মার্কেটে রাখতে হবে এবং একটি চালান গোডাউনে রাখতে হবে এবং একটি চালান আপনাকে আলাদা করে স্টোকে সকল সময়ে রেখে দিতে হবে।

তাহলে মোট হিসাব করলে বোঝা যায় এখানে আপনার 45000 টাকা মত বিনিয়োগ করতে হবে। আপনি যদি ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন তাহলে এই পুঁজি যথেষ্ট আর যদি বড় বিনিয়োগ করে ব্যবসা করতে চান তাহলে আরো বেশি লাগতে পারে।

চা পাতার ব্যবসায় লাভ?

আপনি যদি সঠিক ব্যবসা পদ্ধতি অবলম্বন করে ধৈর্য এবং পরিশ্রম এরশাদের এই ব্যবসাটি করে যেতে পারেন তাহলে অবশ্যই এই ব্যবসার মাধ্যমে আপনি ভাল মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।

আপনাকে এই ক্ষেত্রে কাস্টমারদের মন জয় করতে হবে এবং ভালো মানের চাপাতি কাস্টমারদের কে আপনার দিতে হবে। আপনি যদি একবার আপনার কাস্টমার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে পারেন তাহলে এ ব্যবসার মাধ্যমে আপনি প্রতিদিনই ভালো মুনাফা লাভ করতে পারবেন।

আপনি যত বেশি চা পাতা বিক্রি করতে পারবেন আপনার লাভের পরিমাণ টাকা এক্ষেত্রে ততো বেশি বৃদ্ধি পাবে। এজন্য অবশ্যই আপনার টার্গেটেড কিছু দোকানদারের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

এবং দোকানদারের সংখ্যা আপনি এক্ষেত্রে যত বাড়াতে পারবেন আপনার এই ব্যবসায়িক সফলতার হারটাওও বা কী বেশি বাড়বে। তাই পলায়ে যাই চা পাতার ব্যবসায়ী আপনি ভালো লাভ করতে পারবেন।

চা পাতার ব্যবসায় ঝুঁকি কেমন?

সব ব্যবসায়ী যেমন ঝুঁকি রয়েছে তেমনি চা পাতার ব্যবসা রয়েছে ঝুঁকি। আপনি যখন আপনার চাপাতি বাজারে সেল করবেন তখন হয়তো কেউ বলবে আপনার চায়ের লিকার শর্ট কেউ বলবে তাই বেশি ঘ্রাণ হয়না এমন অনেক জনের কাছে অনেক কথাই শুনতে পারেন।

তাই অবশ্যই ভালো কোন কোম্পানি থেকে আপনাকে চাপাতি সংগ্রহ করে সেগুলো বাজারজাতকরণ করতে হবে না হলে আপনি এই ব্যবসার মাধ্যমে টিকে থাকতে পারবেন না। কেননা সবাই ভালো জিনিস চাই ভালো জিনিস না পেলে আপনার মাল তারা নিবে না। 

তাছাড়া মাল ভালো না হলে এই ক্ষেত্রে আপনি পুঁজি ও হারাতে পারেন। তাই অবশ্যই চাপাতি সংগ্রহ করার আগে ভালো একটি কোম্পানি থেকে আপনাকে চাপাতির সংগ্রহ করতে হবে।

এবং দেখতে হবে যেন এর গুণগতমান অনেক ভাল হয় তাহলে আপনি এই ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন এবং ভাল মুনাফা লাভ করতে পারবেন।

চাপাতির ব্যবসা শুরু করার আগে কিছু টিপস?

আপনারা যারা চা পাতার ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চান তাদের জন্য এই ট্রিক্সগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা শুরু করার আগে। ধরুন আপনি একটি দোকানের চাপাতি বিক্রি করেন সেই দোকানের অনেক কাস্টমার থাকে। 

তারা আপনার চাপাতির চা খেয়ে থাকেন এবং আপনার চাঁদ গুণগত মান ভালো দেখে তারা অন্য দোকানদারের লোকদেরও আপনার দোকানে নিয়ে এসে চা খাওয়ায়। 

এর ফলে দোকানদার প্রতিদিনই আপনার কাছ থেকে চাপাতি সংগ্রহ করবে এবং আপনার বিক্রির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। কিন্তু আপনার চাপাতির গুণগতমান যদি ভালো না হয় তাহলে কাস্টমাররা বেশিদিন আপনার চাপাতির চা খাবে না।

যার ফলে দোকানদারের কাস্টমারের সংখ্যা অনেক কমে যাবে এবং দোকানদার ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং সে আপনার কাছ থেকে চাপাতি সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিবে। এর ফলে আপনার পুঁজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই অবশ্যই চাপাতি ভালো এবং গুণগত মানের যেন হয় সেদিকে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং এটি জেনে-বুঝেই আপনাকে মার্কেটে নামতে হবে। তাছাড়া আপনি চাপাতির ব্যবসা করার মাধ্যমে সফল হতে পারবেন না। 

আমাদের শেষকথা

চা পাতার ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণে হয়তো সবাই বুঝে গিয়েছেন যে কিভাবে চা পাতার ব্যবসা শুরু করবেন এবং চা পাতার ব্যবসা লাভ কেমন। 

আপনারা যদি সঠিকভাবে এই ব্যবসা পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে চা পাতার ব্যবসা করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনারা এই ব্যবসার মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবেন ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারে।

তারপরেও যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থেকে থাকে ব্যবসা সম্পর্কে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন এবং আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url