পাইলট হওয়ার যোগ্যতা - পাইলট হওয়ার খরচ

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জীবনে পড়াশোনা শেষ করে পাইলট হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন। তবে ছোট থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকায় ও কিছু ভুলের কারণে অনেকের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় না।
পাইলট
পাইলট
বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক স্থানে পাইলট হওয়ার জন্য কোর্স চালু করা হয়েছে। আজকের পোস্টে পাইলট হওয়ার যোগ্যতা, পাইলট হওয়ার জন্য কি করতে হবে ও পাইলট হওয়ার খরচ কেমন হতে পারে।

এই নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

পাইলট হওয়ার যোগ্যতা?

পাইলট যে কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই হতে পারবেন না। পাইলট হওয়ার জন্য অবশ্যই কিছু যোগ্যতা নিজের ভিতরে থাকা লাগবে। নিচে পাইলট হওয়ার জন্য কি করতে হবে তা উল্লেখ করা হলোঃ
  • বাংলাদেশ বিমান সহ যে কোন বিমানের পাইলট হতে চাইলে এইচএসসি পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পদার্থ, গণিতসহ ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ পেতে হবে।
  • বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৬ বছর এবং শারীরিকভাবে অবশ্যই ফিট থাকতে হবে।
  • ইংরেজি বলা ও লেখায় অনেক দক্ষ হতে হবে।
  • যারা স্নাতক শ্রেণীতে পড়েছেন বা কোর্স করেছেন তাদেরকে পাইলট কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে।
  • এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হতে হবে দেশের বা বাইরের কোন ফ্লাইং ট্রেনিং একাডেমিতে।
  • প্রথমত গ্রাউন্ড ও ফ্লাইং প্রশিক্ষণ শেষ করে প্রাইভেট পাবলিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।
  • বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান চলাচল কারি কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুসারে লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে ৪০ ঘন্টা ফ্লাইং করতে হবে।
  • আর এই ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে নূন্যতম ১৭ বছর।
  • পিপিএল পাওয়ার পর আবেদন করতে হয় কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সের সি পি এল এর জন্য।
  • এক্ষেত্রে ফ্লাইং করতে হয় ১৫০ ঘণ্টার মতো।
  • সিপিএল করার জন্য ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর।
  • এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে দেশ ও বিদেশের এয়ারলাইন্সে ফাস্ট অফিসার বা কো পাইলট হিসেবে খুব সহজে আবেদন করা যাবে।
এছাড়া পাইলট হওয়ার জন্য আরো কিছু ধাপ আপনাদের অতিক্রম করতে হবে নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হলোঃ

ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া লাগবে

পাইলট কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য সবাইকে সর্বপ্রথম ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে ও ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া লাগবে।এ পরীক্ষা দুটি ধাপে হয়ে থাকে মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

মৌখিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞানের উপরে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। আর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে থাকে সিভিল এডিয়েশন অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মাধ্যমে।

গ্রাউন্ড কোর্স করতে হবে

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা পাইলট কোর্স করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে আপনাদেরকে পাইলট হতে হলে বেরোতে হবে আরো তিনটি ধাপ। গ্রাউন্ড কোর্সের পর পেতে হবে এসবি বা স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্স।

তারপরে পিপিএল ও সবশেষে পেতে হবে সিপিএল বা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। এখানে তিন মাসের থিওরি কোর্সে বিমানের কারিগরি ও এয়ার ল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।

তাছাড়া এখানে আরো এয়ারক্রাফট জেনারেল নলেজ, ফ্লাইট পারফমেন্স এন্ড প্ল্যানিং, নেভিগেশন, অপারেশন প্রসিডিউর ফ্লাইট এর মত বিষয়গুলো নিয়ে ধারণা দেওয়া হয়।

পাইলট হওয়ার সর্বশেষ ধাপ

গ্রাউন্ড কোর্সের পর সংশ্লিষ্ট অ্যাকাডেমিতে লিখিত পরীক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিদেরকে সরাসরি বিমান চালানোর জন্য সিভিল এভিয়েশনে এসপিএল বা স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়।

আবেদন করার পর সিভিল এভিয়েশন অথরিটি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল এসপিএল দেওয়া হয়। এই লাইসেন্স ব্যবহার করে ৪০ থেকে ৫০ ঘন্টা বিমান চালানোর সার্টিফিকেট অর্জন করে পিপিএল বা প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়।

এই সময় তিন মাসের থিওরি ক্লাসের একটি ক্রস কান্ট্রি ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। তারপরে আবারো লিখিত ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মিলবে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স।

এই লাইসেন্স পেতে হলে পাইলটদেরকে অবশ্যই ১৫০ থেকে ২০০ ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাছাড়া উত্তীর্ণ হতে হবে লিখিত ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায়। তাহলেই সিপিএল পাওয়া যাবে আর সিপিএল পাওয়া গেলেই নিশ্চিত চাকরি।

পাইলট হয়ে চাকরি কোথায় পাবেন?

যত সময় যাচ্ছে তত দক্ষ পাইলটের চাহিদা বাড়তেছে।আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা দি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার টেনেস্পোর্ট এসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে জানা গিয়েছে যে প্রতি বছর ১৭ হাজার নতুন পাইলট প্রয়োজন হচ্ছে।

তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারছেন একজন দক্ষ পাইলট যদি হওয়া যায় তাহলে চাকরির অভাব হবে না। আর পাইলটের চাকরি করলে সমাজে বাড়তি সম্মান পাওয়া যাবে ও অনেক টাকা বেতন পাওয়া যাবে।

পাইলট হওয়ার খরচ?

বাংলাদেশে পিপিএল পাওয়ার খরচ চার লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই খরচের মধ্যেই সাধারণত গ্রাউন্ড স্কুল, ফ্লাইট প্রশিক্ষণ, ও পরীক্ষার ফি মিটে যাবে।

প্রশিক্ষণের সময়কাল ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। বাংলাদেশে সিপিএল পাওয়ার জন্য ৩৫ লক্ষ টাকা থেকে ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

এই খরচের মধ্যে গ্রাউন্ড স্কুল, ফ্লাইট প্রশিক্ষণ, বিমান ভাড়া, পরীক্ষার্থী এবং চিকিৎসার পরীক্ষার ফি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের সময়কাল এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে।

এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স প্রাপ্তির খরচ ৬০ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ৯০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই খরচের মধ্যে রয়েছে গ্রাউন্ড স্কুল,ফ্লাইট প্রশিক্ষণ, বিমান ভাড়া, পরীক্ষার ফি ও চিকিৎসার পরীক্ষার ফি অন্তর্ভুক্ত।

আর পরীক্ষার সময়কাল দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। এখানে আপনি কত ঘনঘন উড়তে পারবেন ও কত দ্রুত আপনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন তার ওপর নির্ভর করে থাকে।

পাইলট হতে হলে কোথায় পড়তে হবে?

পাইলট হতে হলে স্বীকৃত এভিয়েশন ইনস্টিটিউট থেকে কোর্স সম্পূর্ণ করে তারপর পাইলট হওয়ার লাইসেন্স নিতে হবে। কোর্স সম্পূর্ণ করার আগে কোন ব্যক্তি পাইলট হওয়ার লাইসেন্স নিতে পারবেন না।

তাছাড়া পাইলট হতে হলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান সহ উচ্চ মাধ্যমিকের পাশ করা জরুরী।

পাইলট হওয়ার শারীরিক যোগ্যতা?

পাইলট হওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে। তাছাড়া পাইলট হতে গেলে অবশ্যই ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে। কেননা পাইলট পেশায় কাজ করতে হলে অবশ্যই ইংরেজি ভাষা জানার কোন বিকল্প নেই।

পাইলট হওয়ার সুবিধা?

একজন পাইলট সাধারণত প্রাথমিক অবস্থায় ২ লক্ষ টাকার মত বেতন পেয়ে থাকেন। প্রতিবছর তাদের বেতনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাছাড়া পাইলটরা চাইলে দেশে-বিদেশে যেকোনো স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন।

তাছাড়া যারা পাইলটের কাজ করে থাকেন তারা সরকারি ও বেসরকারি অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে পাইলটের রয়েছে সুন্দর ভবিষ্যৎ।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে পাইলট হওয়ার যোগ্যতা ও পাইলট হতে হলে কোথায় পড়তে হবে এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।

তারপরেও পোস্টটি পড়ে যদি কোন বিষয়ে সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে বা এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url