সাংবাদিক কাকে বলে - সাংবাদিক হওয়ার উপায়

সাংবাদিকতা (Journalism) হল অত্যন্ত সম্মানজনক একটি পেশা। একজন সাংবাদিক মূলত সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন ও ওয়েব পোর্টালের জন্য খবর জোগাড় করা, সংবাদ ও কলাম লেখা, সম্পাদনা, পরিমার্জন, পরিবেশন ও ছবি সংগ্রহের কাজ করে থাকেন।
সাংবাদিক
সাংবাদিক
আমাদের দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সাংবাদিকদের কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্র বেশ বড় হওয়ায় অনেকেই নির্দিষ্ট বিভাগে মনোযোগ দেন। যেমনঃ ক্রীড়া সাংবাদিকরা শুধু খেলাধুলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করেন।

সাংবাদিক কি?

সংবাদপত্র অফিসে কর্মরত সম্পাদক, উপ-সম্পাদকীয় লেখক, বার্তা সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, ফিচার সম্পাদক, প্রুফ রিডার, লিপিবদ্ধকার, কার্টুনিস্ট, আলোকচিত্রী, প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি এরা সকলেই সাংবাদিক।

এরা খবরের সন্ধান করেন ও খবরের পেছনে ছোটেন, খবর নির্বাচন করেন, সম্পাদনা করেন ও সংশোধন করেন। আর সাংবাদিকরা যা করেন তাই হচ্ছে সাংবাদিকতা।

অন্যদিকে সাংবাদিকতা হল এক ধরনের কাজ। এদের মূল কাজ হল তথ্য সংগ্রহ করা, প্রতিবেদন লেখা ও সম্পাদনা করা।

সাংবাদিকতা কি?

তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই ও সংগৃহীত তথ্য প্রতিবেদন আকারে জনসম্মূখে তুলে ধরাই হল সাংবাদিকতা। একজন সাংবাদিক তার তৈরি প্রতিবেদনটি প্রিন্ট, টিভি ও অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন।

একজন সাংবাদিক দেশে বিদেশে ঘটে যাওয়া যেকোন বিষয়ের ওপর লেখালেখি করতে পারেন। মূলত নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের সাংবাদিক ক্যারিয়ার গড়ে ওঠে। যেমনঃ
  • ক্রীড়া সাংবাদিক
  • বিনোদন সাংবাদিক
  • নাগরিক সাংবাদিক
  • সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিক
  • কৃষি সাংবাদিক
  • সাংস্কৃতিক সাংবাদিক
  • অনুসন্ধানি সাংবাদিক
তবে আপনি যে ক্যাটাগরির লেখকই হোন না কেন, সাংবাদিকতা হল একটি জটিল প্রক্রিয়া। কারণ একটি ঘটনার প্রতিবেদন পাঠক অথবা দর্শকের সামনে তুলে ধরার জন্য অনেক তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়।

পরবর্তীতে উক্ত তথ্য ও উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে তা চূড়ান্ত রূপ দিতে হয়। সাংবাদিকতাকে সমাজের দর্পণ অথবা আয়নার সাথে তুলনা করা হয়। কারণ একজন আদর্শ সাংবাদিকের লেখনীতে আমাদের সমাজের হাসি-খুশি, দুঃখ-দুর্দশা, ভাল ও মন্দ দিক উঠে আসে।

একই সঙ্গে সাংবাদিকবৃন্দ লাইফস্টাইল, আবহাওয়া, বিজ্ঞান, চিকিৎসা আপডেট, শিক্ষা ও প্রযুক্তিসহ আরও অনেক বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য সরবারহ করে থাকেন।

একজন সাংবাদিকের কাজ কি?

প্রতিষ্ঠানের ধরণ অনুযায়ী ১ জন সাংবাদিকের কাজের ধরণ আলাদা হয়। তবে যেকোন মাধ্যমে সাধারণ কিছু কাজ থাকে। যেমনঃ
  • সংবাদ সংগ্রহ করা
  • সংবাদের সত্যতা যাচাই করা
  • সংবাদ সম্পাদনা করা
  • প্রয়োজনে মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া
  • তথ্য এবং উপাত্ত বিশ্লেষণ করা
  • প্রয়োজনীয় ছবি সংগ্রহ করা
  • বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা
  • কলাম লেখা ও বাছাই করা
যেহেতু সাধারণ মানুষের জীবনে গণমাধ্যমের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। আর তাই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা ১ জন সাংবাদিকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও সংবেদনশীল খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে তথ্যদাতার গোপনীয়তা রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।

সাংবাদিক হওয়ার উপায়?

সাংবাদিকতা হল একটি চ্যালিঞ্জিং পেশা। আর তাই একজন অভিজ্ঞ এবং সফল সাংবাদিক হতে হলে আপনাকে সৎ, সাহসী ও নির্ভিক হতে হবে। পাশাপাশি আপনার মধ্যে থাকতে হবে সৃজনশীল লেখনির শক্তি।

একজন সফল সাংবাদিক হতে চাইলে আপনার মধ্যে যে গুণাবলী থাকতে হবে, তা নিচে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলঃ

লেখনী শক্তি

আপনি যদি পেশাদার কোন গণমাধ্যমে কাজ করতে চান। তাহলে প্রতিদিনই আপনাকে নিত্য নতুন প্রতিবেদন লিখতে হবে। কিন্তু আপনার মধ্যে যদি কোন সৃজনশীল লেখনী শক্তি না থাকে, তাহলে প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয়ের ওপর আপনি লিখতে পারবেন না।

আর তাই বিশ্লেষণধর্মী লেখা উপহার দেওয়ার জন্য আপনার ভেতরে সৃজনশীল লেখনী শক্তি থাকা একান্ত অত্যাবশ্যক। ব্লগিং, সংবাদ সংস্থা অথবা অন্যান্য মিডিয়া আউটলেটের জন্য ১জন ফ্রিল্যান্স লেখক হওয়া লেখালেখিতে অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি উপায়।

মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন জিনিসগুলো সম্পর্কে লিখুন এবং যেকোনও অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি গল্প খুঁজে পাওয়ার আপনার সক্ষমতা প্রদর্শন করুন।

এতে করে আপনি আপনার চাকরির সিভিতে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত করতে পারবেন। সম্ভাব্যভাবে ইহা আপনাকে একটি এন্ট্রি-লেভেলের চাকরি দিতে ও সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ারের পথে সাহায্য করবে।

যোগাযোগ ও সম্পর্ক

সংবাদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের তাগিদে আপনাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে হবে। যেমন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন হতে পারে।

উপস্থপনা

আপনি যে কেবল প্রিন্ট মিডিয়ায় সাংবাদিকতা করবেন বিষয়টা এমন না। আপনি চাইলে কোন টেলিভিশন চ্যানেলেও কাজ করতে পারেন। তবে টেলিভিশনে কাজ করতে হলে আপনাকে ক্যামেরার সামনে আসতে হবে।

আর ক্যামেরার সামনে আসতে হলে আপনার কথা বলার ভঙ্গি, শারীরিক ভাষা ও শব্দচয়ন অত্যন্ত পরিপাটি হতে হবে। ক্যামেরার সামনে আপনি নিজেকে যতটা সুন্দরভাবে উপস্থপন করতে পারবেন, আপনার প্রতিবেদনটিও ঠিক ততটা চিত্তাকর্ষক হবে।

যার ফলে আপনার কাজের প্রতিষ্ঠান তথা দর্শকদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

সাহস

সাংবাদিকতার জন্য সর্বপ্রথম যা দরকার হয়, তাহলো সৎ সাহস। আপনি যদি ১ জন ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে থাকেন, তাহলে তথ্য সংগ্রহের জন্য আপনাকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মূখীন হতে হবে।

কখনো কখনো আপনার সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে আপনি অপরাধিদের আক্রোশের শিকার হতে পারেন। তবে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন মহল হতে ক্রমাগত হুমকি, সময় বিশেষে প্রাণনাশের হুমকিও আসবে।

কিন্তু ১ জন সফল সাংবাদিক হতে হলে এসব হুমকিতে ভয় পেলে চলবে না। আর তাই আপনার ভেতরে যদি নির্ভিক ও সৎ সাহস কাজ করে, তবেই আপনি সাংবাদিকতাকে জয় করতে পারবেন।

নেটওয়ার্কিং

সম্পাদক, সংবাদ প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অন্যান্য সাংবাদিকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করুন। ১ জন পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার পথে আপনার কাজ করার সময় এই লোকেরা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও সহায়ক পরামর্শ দিতে পারে। আপনার নেটওয়ার্ক যত বড় হবে, রেফারেন্স হিসেবে আপনার নামটি তত বেশি মনে পড়বে।

সাংবাদিক হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা?

যদিও সাংবাদিকতা জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার তেমন কোন বাধা-ধরা কোন নিয়ম নেই। তবে নূন্যতম এইচএসসি পাশ করাকে বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। দেশের নামি এবং জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলো স্নাতক (অনার্স) অথবা স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) চায়।

কিছু ভাল মানের অনলাইন পোর্টালে অনার্স পড়ুয়াদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তবে আপনি যদি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে থাকেন, তাহলে শুধু সাংবাদিকতার ওপর দুই বছরের বিশেষায়িত কোর্স করতে পারেন।

বর্তমানে আমাদের দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাংবাদিকতার ওপর ডিগ্রী দিয়ে থাকে। পাশাপাশি আপনি চাইলে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) থেকেও একটি কোর্স করে নিতে পারেন।

পিআইবি থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে হলে আপনাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বীকৃত অন্য যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় হতে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি ও এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত যেকোন ২টি পরীক্ষায় কমপক্ষে ২য় শ্রেণি অথবা জিপিএ-৩ গ্রেড প্রাপ্ত হতে হবে।
 
তবে সংবাদপত্রসহ যেকোন গণমাধ্যম, বিজ্ঞাপন ও জনসংযোগে কর্মরতদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আর তাই আপনার যদি এমন কোন সুবিধা থেকে থাকে, তবে অবশ্যই আবেদনপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র দাখিল করতে পারেন।

আপনি কোথায় সাংবাদিকতা করবেন?

শুরুতেই আপনি কোন সেক্টরে বেতনভুক্ত সাংবাদিক হিসেবে চাকরি পাবেন না। এর জন্য আপনাকে কিছুটা সময় ব্যয় করতে হবে। নির্দিষ্ট এই সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ব্লগে লেখালেখি করুন।

এতে করে লেখালেখির ওপর আপনার অভিজ্ঞতা খু্বই বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও অনলাইনে এমন অনেক প্লাটফর্ম আছে, যেখানে আপনি লেখালেখি করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

অথবা আপনি চাইলে নিজের নামে একটি নিউজ পোর্টাল তৈরি করে সেখান থেকেও ভালে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন। সুতরাং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজের লেখা ব্লগ গুলো অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশ করতে থাকুন।

কোন লেখাগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ খুব বেশি, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। ব্যস, আপনাকে আর তেমন কিছু করতে হবে না। যা করার সেটা এবার সংবাদপত্রের মালিকরাই করবে।

আপনার ডাক চলে আসবে কোন সংবাদপত্র অথবা মিডিয়া হাউজের কাছ থেকে। তবে একটি ভুল কখনোই করবেন না। কোন সংবাদ মাধ্যমের অফিসে গিয়ে কাজের জন্য কখনো আর্জি জানাবেন না।

সুযোগ বুঝে এরা বিনা পয়সায় খাটিয়ে আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তার থেকে ভাল হবে নিজের একটি অনলাইন পোর্টাল খুলে লিখতে থাকুন। এতে করে মাস শেষে আপনার ভাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন পারবেন, পাশপাশি লেখার অভিজ্ঞতাও বৃদ্ধি পাবে।

একজন সাংবাদিক কোথায় কাজ করেন?

  • গণমাধ্যম
  • সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন
  • রেডিও
  • টেলিভিশন
  • সরকারি বার্তা বাতায়ন বিভাগ অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • গবেষণা প্রতিষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপনী সংস্থা
  • প্রকাশনা সংস্থা ইত্যাদি।

টিভি এবং রেডিও

সরকারি তিনটি এবং বেসরকারি প্রায় ২২টি টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচারিত হচ্ছে। সেখানে আলোকচিত্রী, প্রতিবেদক, উপস্থাপক, সম্পাদক, প্রযোজক ও বার্তাকক্ষ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজের ক্ষেত্র রয়েছে।

প্রিন্ট এবং অনলাইন মিডিয়া

বর্তমানে আমাদের দেশে বাংলা এবং ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় ৪২টি দৈনিক খবরের কাগজ এবং ৪টি স্বীকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। আর এগুলোতে সাংবাদিকতা করার বড় সুযোগ রয়েছে।

এছাড়াও নিউজ এজেন্সির মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এবং বেসরকারিভাবে পরিচালিত ইউনাইটেড নিউজ এজেন্সিতে আপনি সম্পাদক, উপ-সম্পাদক অথবা কলাম লেখকের কাজ পেতে পারেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বেতার ছাড়াও বর্তমানে বেসরকারি খাতে মোট ২৮টি এফ এম রেডিওকে লাইসেন্স এবং ফ্রিকুয়েন্সি দেয়া হয়েছে। এগুলোতে মূলধারার সাংবাদিকতার পাশাপাশি সংবাদ পাঠক, উপস্থাপক, সম্পাদক, প্রতিবেদকসহ বিভিন্ন পদে ইতোমধ্যে অনেকেই কাজ করছেন।

অন্যান্য

সরকারি এবং বেসরকারি বহু কার্যালয়ে গণযোগাযোগ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা মুদ্রণ, পরিস্ফুটন, বিপণন এবং যোগাযোগের কাজ করে থাকেন।

এছাড়াও বিজ্ঞাপনী সংস্থা এবং চলচ্চিত্র বিভাগেও সাংবাদিকদের কাজের সুযোগ আছে। তাছাড়া অনেকে নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ না করে ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন।

একজন সাংবাদিকের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতা

প্রত্যেক সাংবাদিককে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা অথবা গণযোগাযোগ বিষয়ে পড়তে হবে, এমন কোন কথা নেই। বাংলা, ইংরেজি সাহিত্য, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাও এ পেশায় নিয়োজিত আছেন।

তবে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে আগে থেকেই যারা নির্বাচন করে রাখেন, তাদের জন্য সাংবাদিকতা এবং গণযোগাযোগ বিষয়ে পড়াই অনেক ভাল হবে।

অভিজ্ঞতা

কাজ সাপেক্ষে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়।

বয়স

প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়ে থাকে।

একজন সাংবাদিকের কি ধরনের দক্ষতা এবং জ্ঞান থাকতে হয়?

ভাষাগত দক্ষতা

বাংলা এবং ইংরেজি এই দুই ভাষাতে ভাল ভাষাগত দক্ষতা থাকা জরুরি।

অনুসন্ধানী মনোভাব

আপনাকে কোন কিছুর ব্যাপারে অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহের মানসিকতা থাকতে হবে।

যোগাযোগের দক্ষতা

বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগের অভ্যাস থাকা একান্ত প্রয়োজন।

উপস্থাপনার জ্ঞান

পাঠক অথবা দর্শক শ্রোতার কাছে খবর উপস্থাপন করার ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে।

লেখালেখির দক্ষতা

বিভিন্ন ধরনের লেখালেখিতে অভ্যস্ত থাকা এ পেশায় একান্ত প্রয়োজন।

বিশ্লেষণী ক্ষমতা

কিছু ক্ষেত্রে শুধু তথ্য-উপাত্তের উপর নির্ভর না করে লেখায় অথবা সংবাদে যৌক্তিক চিন্তার প্রকাশ ঘটানো প্রয়োজন। আপনার কারিগরি কিছু জ্ঞান থাকলে আপনি অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন।

যেমনঃ ফটোশপ অথবা ইলাস্ট্রেটরের প্রাথমিক ব্যবহার শিখে রাখলে তা কাজে দেবে। এর বাইরে ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত থাকলে আপনার কাজ অনেক সহজ হবে।

আগে থেকে নিজের পছন্দের বিষয়ে ঠিকভাবে জানা উচিত। যেমনঃ ক্রীড়া সাংবাদিক হতে চাইলে খেলাধুলা বিষয়ক বই, ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের আপডেট নেওয়ার অভ্যাস থাকতে হবে।

একজন সাংবাদিক হিসেবে কপিরাইট বিষয়ক আইনের জ্ঞান থাকা আপনার জন্য একান্ত জরুরি। সর্বশেষ যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে আপনার সৃজনশীলতা। আর তাই নিজেকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীল করে তোলার চেষ্টা থাকা চাই।

সুযোগ পেলে কোন সংবাদপত্রে ইন্টার্নশিপ করতে পারলে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। এছাড়াও কাজের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে প্রাধান্য পেতে পারেন চাকরিদাতাদের কাছে।

একজন সাংবাদিকের মাসিক আয় কেমন?

স্থায়ী এবং অস্থায়ী মেয়াদে ১জন সাংবাদিক এন্ট্রি লেভেল মাসে গড়ে ৳৩০,০০০ আয় করে থাকেন। এ পেশায় অভিজ্ঞতার সাথে সাথে আয় বাড়ার সুযোগ আছে। তবে বেতন সীমা প্রতিষ্ঠান এবং কাজের ধরণ অনুযায়ী আলাদা হয়।

একজন সাংবাদিকের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

আসলে একজন সাংবাদিকের ক্যারিয়ার কেমন হবে, তা প্রতিষ্ঠান ও কাজের উপর নির্ভর করে। সাধারণত সংবাদপত্র অথবা ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে একজন সংবাদদাতা হিসাবে আপনার ক্যারিয়ার শুরু হবে।

এরপর ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে কাজের মানের উপর ভিত্তি করে স্থায়ী প্রতিবেদকের পদ পাবেন। এরপর কোন নির্দিষ্ট বিভাগে উপসম্পাদনার কাজও পেতে পারেন।

ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে একজন সাংবাদিক পুরো পত্রিকার মূল সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওর ক্ষেত্রে প্রতিবেদক অথবা সংবাদ পাঠক/উপস্থাপক হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।

পরবর্তীতে সম্পাদক, প্রযোজক ও বার্তাকক্ষ নিয়ন্ত্রকসহ অন্যান্য অনেক সিনিয়র পদে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কোথায় পড়বেন সাংবাদিকতা?

আমাদের বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়টি পড়ানো হয়। এর মধ্যে কয়েকটির নাম নিচে দেওয়া হলঃ
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
  • ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস
  • স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি
  • ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি
মূলধারার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (BIJEM), প্রেস ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ (PIB) ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউটসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে সাংবাদিকতার উপর ডিপ্লোমা কোর্স প্রদান করা হয়।

এক নজরে একজন সাংবাদিক?

  • সাধারণ পদবীঃ সাংবাদিক
  • বিভাগঃ গণমাধ্যম
  • প্রতিষ্ঠানের ধরণঃ সরকারি ও বেসরকারি এবং ফ্রিল্যান্সিং
  • মূল স্কিলঃ ভাষাগত দক্ষতা, তথ্য অনুসন্ধানে দক্ষতা, উপস্থাপনার দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা
  • বিশেষ স্কিলঃ বিশ্লেষণী ক্ষমতা, সৃজনশীলতা
  • ক্যারিয়ারের ধরণঃ ফুল-টাইম ও পার্ট-টাইম
  • লেভেলঃ এন্ট্রি, মিড এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা
  • এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতনঃ ৳২০,০০০ – কাজ, প্রতিষ্ঠান ও অভিজ্ঞতাসাপেক্ষ
  • এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সঃ কাজসাপেক্ষ
  • সীমাঃ কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
শেষ কথা, সাংবাদিকতা হল একটি মহৎ পেশা। ইহা সমাজের দর্পণ স্বরূপ। যদিও অনেকে বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে এসে মহৎ এই পেশাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে থাকেন। দীর্ঘ এই আলোচনায় আমরা সাংবাদিক হওয়ার উপায় গুলো তুলে ধরেছি।

আশা করছি এগুলো অনুসরণের ফলে আপনি একজন আদর্শ সাংবাদিক হয়ে উঠতে পারবেন। আসলে ভবিষ্যতে চাকরির সম্ভাবনা কেমন হবে তা এক কথায় বলা সহজ নয়।

প্রতিনিয়তই সংবাদ এবং সাংবাদিকতার ধরণ, গণ্ডি, কার্যক্রম এবং প্রযুক্তিগত প্যাটার্ণ সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। কখনো এই পরিবর্তন আনছে ভাল কিছু। আবার কখনো নিয়ে আসছে শূন্যতা।

এসব কিছুর পাশাপাশি বাড়ছে প্রতিযোগিতাও। সব কিছুমিলে সাংদিকতা সেক্টরের চাকুরির বাজারে কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে।

তবে আপনি যদি কৌশলী এবং সাম্প্রতিক সাংবাদিকতার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য অর্জন করতে পারেন। তাহলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে চাকরি অথবা কর্মক্ষেত্রের কোন অভাব হবে না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url