ব্লগ কি - ব্লগ তৈরির নিয়ম

ব্লগ অর্থ কি?

ব্লগ শব্দটি হল ইংরেজি Blog এর বাংলা প্রতিশব্দ। যা এক ধরনের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। আর ইংরেজি Blog শব্দটি Weblog এর সংক্ষিপ্ত রূপ। 

ব্লগিং কি? 

অনলাইনে কোন কিছু পোস্ট করা বা অনলাইনে কোন কিছুকে ধারাবাহিক ভাবে লিপিবদ্ধ করাকেই ব্লগিং বলে। অন্যভাবে বলা যায় মানুষ যে রকম প্রতিদিন ডাইরি লিখে ঠিক সে রকম ভাবে লেখা। 
ব্লগ
ব্লগ
তবে এর মধ্যে পার্থক্যটা হল ডাইরি লিখা হয় ডাইরিতে কলম দিয়ে। আর ব্লগিং (Blogging) এর উদ্দেশ্য লিখা হয় ওয়েবসাইটে। অন্যভাবে বলা যায় ব্লগিং (Blogging) হল একটি অনলাইন জার্নাল অথবা ইনফর্মেশনাল ওয়েবসাইট। 

যেখানে মানুষ বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে বা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ইনফরমেশন দিয়ে থাকেন।

ব্লগার কাকে বলে? 

যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার বলা হয়। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন। আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন।

ব্লগার কারা?

ব্লগার হল একজন ব্যক্তি যিনি ব্লগে কন্টেন্ট লিখেন এবং ব্লগ পরিচালনা করেন। অর্থাৎ যিনি ব্লগের জন্য কন্টেন্ট বা আর্টিকেল লিখেন তাকেই ব্লগার বলে। আপনিও একজন ব্লগার হতে পারবেন তার জন্য দরকার একটি ব্লগ শুরু করা ও ব্লগে লেখা পোস্ট করা।

ব্লগিং এর জনক কে?

১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ সর্বপ্রথম ‘weblog’ শব্দটির আবিষ্কার করেন জর্ন বার্গার নামক একজন ব্যক্তি। ঠিক এরপরেই ১৯৯৯ সালের মার্চ বা এপ্রিল মাসের দিকে ‘পিটার মেরহোলজ’ তার নিজস্ব ব্লগ পিটার্ম ডট কম এ কৌতুক করে ‘Weblog’ শব্দটিকে ভাগ করে ‘Blog’ বলে সম্বোধন করেন। 

তারপর থেকে ‘Blog’ শব্দটির ব্যবহার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ইভান উইলিয়ামস নামের একজন ব্যক্তি ব্লগার (Blogger) শব্দটি আবিষ্কার করেন। মোটকথা ব্লগিং এর জনক হল  ইভান উইলিয়ামস।

ব্লগ কত প্রকার?

ব্যবহারের প্রকার অনুযায়ী ব্লগকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায় যেমনঃ
  • পার্সোনাল ব্লগ
  • প্রাতিষ্ঠানিক ব্লগ
  • নিশ ব্লগ

পার্সোনাল ব্লগ কি?

কেউ যখন নিজের ব্যক্তিগত ভাবে ব্লগ লিখে তখন সেটাকে পার্সোনাল ব্লগ বলে।

প্রাতিষ্ঠানিক ব্লগ কি?

কোন কোম্পানি যখন কোম্পানির জন্য ব্লগ করে তখন সেটাকে প্রাতিষ্ঠানিক ব্লগ বলে।

নিশ ব্লগ কি?

নির্দিষ্ট করে কোন একটি নিশ বা টপিকের উপর ব্লগ লেখাকে নিশ ব্লগ বলে। যেমনঃ কিছু ব্লগ শুধু ছবি নিয়েই তৈরি করা হয়। সেটা হল ছবির ব্লগ। এমন বিভিন্ন টপিকে বিভিন্ন ব্লগ করা যায়। 

ব্লগিং নিশ আইডিয়া?

ব্লগিং শুরু করার জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি টপিক বা আইডিয়াঃ
  • Health & Fitness
  • Travel Guide
  • Fashion and Lifestyle
  • Reviews Blog
  • Inspirational Blog
  • Education

ব্লগিং ও ব্লগ এর ইতিহাস?

ব্লগের প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল আমেরিকার নাগরিক জন বার্জার এর weblog থেকে। ১৯৯৭ সালের শেষ মাসে তিনি ব্লগিং শুরু করেন। 

পরে আমেরিকার আরো একজন weblog কে ভেঙ্গে শুধু Blog শব্দটি ব্যবহার করেন। সেখান থেকেই ব্লগের শুরু। 

কেন আপনি ব্লগিং করবেন?

আপনি যদি চাকরি অথবা পড়াশোনার পাশাপাশি প্যাসিভ ইনকাম খুঁজতে থাকেন। তাহলে ব্লগিং হল আপনার জন্য সেরা চয়েস। 

কারণ হল আপনি করে বসে ব্লগিং (Blogging) থেকে মোটামুটি দুই তিন ঘন্টা কাজ করে ভাল পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন।

কিভাবে ব্লগিং থেকে আয় করা যায়?

ব্লগিং(Blogging) থেকে তিন ভাবে আয় করা যায়ঃ
(১) গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে এফিলিয়েট (২) মার্কেটিং (Affiliate Marketing) এর মাধ্যমে (৩)
আপনার যদি নিজের কোন পার্সোনাল প্রোডাক্ট থাকে সেগুলো আপনার ব্লগের মাধ্যমে প্রমোশন করতে পারবেন। 

এবং সেখান থেকে ভাল একটা লিড জেনারেট করতে পারবেন। তবে বেশির ভাগ ব্লগাররা গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে ইনকাম করে থাকে।

ব্লগিং শুরু করার পরিকল্পনা?

ব্লগিং শুরু করার জন্য তেমন কোন প্রস্তুতি বা পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না। তবে হ্যাঁ ব্লগিং (Blogging) শুরু করার আগে আপনাকে কয়েকটি জিনিস অবশ্যই মনে রাখতে হবে। 

তাহলে চলুন এক নজরে জেনে নেই কোন বিষয়গুলো আপনাকে মাথায় রাখতে হবে সেগুলো হলঃ 
  • আপনি কোন বিষয়ে আর্টিকেল পাবলিশ করবেন আগে থেকে বাচাই করে নিন। 
  • সে অনুযায়ী আপনার ওয়েবসাইটকে ডিজাইন করুন অথবা সাজিয়ে নিন। 
  • এছাড়াও আর্টিকেল লেখার সময় অবশ্যই অন্য কারো আর্টিকেল কখনো কপি করে লিখবেন না। 
  • আপনার আর্টিকেলের মধ্যে যে ছবি গুলো ব্যবহার করবেন সেগুলো যেন ক্লিয়ার এবং ইউনিক দেখায়। 
  • ইমেজ ব্যবহারের সময় অল্টার টেক্সট (Alter Text), Image টাইটেল, Image ক্যাপশন ইত্যাদি ব্যবহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। 
  • আর্টিকেল লেখার সময় অবশ্যই আর্টিকেল টাইটেল (Title), হেডিং (Heading), সাব -হেডিং (Sub-Heading), প্যারাগ্রাফ (Paragraph) এই HTML Tag গুলো যেন থাকে। 
  • এরপর আর্টিকেল লেখার সময় অবশ্যই এক্সটার্নাল LINK ব্যবহার করবেন।

ব্লগিং শুরু করার জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা?

ব্লগিং শুরু করার জন্য আপনি যদি ফ্রিতে কোন ওয়েবসাইট বানাতে চান তাহলে আপনি গুগলের সাহায্য নিতে পারেন। 

কেননা গুগোল দিচ্ছে আপনাকে সম্পূর্ণ ফ্রি হোস্টিং এবং একটি SUB DOMAIN, যা পরবর্তীতে SUB DOMAIN কে আপনি মাস্টার ডোমেইনে কনভার্ট করে নিতে পারেন।

যদি একটি ব্লগার সাইট বানাতে চান তাহলে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেনঃ https://www.blogger.com/ ব্লগার এর ইন্টারফেসটি ব্যবহার করা অনেক সহজ। এবং খুব সহজেই এডসেন্স APPROPVE পাওয়া যায়।

আপনি চাইলে ডোমেইন হোস্টিং কেনার পরে ওয়াডপ্রেস (WORDPRESS) সিএমএস ব্যবহার করেও একটি ব্লগিং (Blogging) ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারেন। 

সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনতে হবে প্রয়োজনে থিম ও Plugins কিনতে হবে।

কিভাবে মানসম্মত আর্টিকেল লিখতে হবে?

কিভাবে হাই কোয়ালিটি আর্টিকেল কনটেন্ট লিখতে হয়। সে বিষয়টি নির্ভর করে আপনি কার জন্য কনটেন্ট লিখছেন সেই বিষয়টা জানা অত্যন্ত খুব প্রয়োজন। আপনি কি ছোট বাচ্চাদের জন্য কনটেন্ট লিখছেন? 

না কি আপনি পুরুষ বা মহিলাদের জন্য লিখছেন? আপনি কোন ক্যাটাগরিতে লিখছেন বিষয়টা অবশ্যই আপনার মাথায় রাখতে হবে। আপনি যদি মানসম্মত আর্টিকেল লিখতে চান তাহলে নিচের কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করবেনঃ
  • আর্টিকেল এর টাইটেল সিলেকশন।
  • ওই টাইটেল টপিক নিয়ে ইন্টারনেটে রিসার্চ করা।
  • রিসার্চের উপাত্ত গুলোকে এক জায়গায় সংগ্রহ করা।
  • পরবর্তীতে আর্টিকেল গুলোকে একটি ফরমেটে সাজানো।
  • ইমেজের অফ-লাইন SEO করা।
  • পার্মালিংক এবং সার্চ ডিস্ক্রিপশন বসানো। 
  • আর্টিকেল এর জন্য ইমেজ কালেকশন অথবা ইমেজ ডিজাইন করা।
  • সর্বশেষে <h1>,<h2>,<h3>,<h4>,<p> HTML Tag গুলো ব্যবহার করে আর্টিকেল পাবলিশ করা।

গুগল এডসেন্স এর জন্য কি কি শর্ত রয়েছে?

গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense) অ্যাপ্রুভাল পেতে হলে আপনাকে বেশ কয়েকটি স্টেপ অনুসরণ করতে হবে যেমনঃ
  • গুগল এডসেন্স (Google AdSense) এর প্রথম শর্ত হল আপনার একটি ভাল মানের ওয়েবসাইট থাকতে হবে।
  • সেই ওয়েবসাইটে 1000 ওয়ার্ড বা এর চেয়ে কম ২৫ থেকে ৩০ টি পোস্ট থাকতে হবে। 
  • পোস্টগুলো হতে পারে বাংলা কিংবা ইংরেজিতে। 
  • ওয়েবসাইটের মধ্যে ট্রাফিক থাকতে হবে। 
  • অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত লোকজন যেন ভিজিট করে।
  • এছাড়াও অন্যের কোন আর্টিকেল কপি (Copy) করে পাবলিশিং করা যাবে না।
  • কপিরাইট রয়েছে এমন ইমেজ ব্যবহার করা যাবে না।
  • অবশ্যই আপনার বয়স ১৮ হতে হবে। 
  • আর যদি ১৮ বছর বয়স না হয়। 
  • তাহলে অভিভাবকের নামে গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে গুগল এ্যাডসেন্সে এপ্লাই করতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় ব্লগিং বাংলাতে নাকি ইংরেজিতে শুরু করবেন তা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে। তবে ইংরেজিতে ব্লগ শুরু করলে আপনার ইনকামের মাত্রা বেশি থাকবে। 

কারণ হল তখন আপনার ভিজিটর থাকবে সারা পৃথিবী জুড়ে। যার ফলে আপনার এডসেন্স এর CPC Rate অনেক বেশি থাকবে। আর বাংলাতে ব্লগিং করলে এডসেন্স এর CPC Rate খুব কম থাকে। 

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করা যায় মনে করেন আমেরিকান একজন ভিজিটর আপনার এড এ ক্লিক করলো তাহলে আপনি প্রায় .৮০ সেন্ট অবদি পেতে পারেন। 

কিংবা এর কম ও আর বেশি পেতে পারেন। অপরদিকে বাংলাদেশের কোনও ভিজিটর এড এ ক্লিক করে তাহলে আপনি পাবেন প্রায় .০২/.০৪ সেন্ট পর্যন্ত পেতে পারেন।

তাহলে পার্থক্যটা বুঝতেই পারছেন, সম্পূর্ণ আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আপনার যদি ইংরেজিতে ভাল ধারণা বা দক্ষতা থাকে। তাহলে আপনি ইংরেজিতেই আপনার ব্লগিং যাত্রা শুরু করতে পারেন। 

আসলে যেকোন স্থানে সফলতা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় প্রয়োগ করতে হবে। আপনি আপনার সমস্ত দক্ষতা ও ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্লগিং করে সফলতা পেতে পারেন। 

তবে নতুন ব্লগ শুরু করলে প্রাথমিক অবস্থায় অনেক ধরণের ভুল করবেন। কিন্তু ধৈর্য্য শক্তি কখনো হারাবেন না। ধৈর্য্যশক্তি ও কঠোর মনোবল নিয়ে কাজ শুরু করুন সফলতা একদিন আসবেই ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url